ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের কলকাতায় খুন হওয়ার ঘটনায় মামলা করেছে তার পরিবার।

বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলায় এমপি আনারকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আনারের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন মামলা দায়ের করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহাদ আলী।

এজহারে ডরিন উল্লেখ করেন, “আপনার থানায় হাজির হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে এই মর্মে এজাহার দায়ের পূর্বক জানাচ্ছি– ৯ মে রাতে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার আমাদের ঢাকার বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে তিনি আমার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা করেন। বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এর পর বাবার ফোনে একাধিকবার কল দিলে তার ফোন বন্ধ পাই। গত ১৪ মে আমার বাবার ইন্ডিয়ান নম্বরে উজির মামার হোয়াটসআপ নম্বরে একটি ম্যাসেজ আসে – ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে। আমি অমিত সাহার কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। আমি পরে ফোন দিব।”

তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি ম্যাসেজ আসে। ম্যাসেজগুলো আমার বাবার ফোন ব্যবহার করে অপহরনকারীরা করে থাকতে পারে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় আমার বাবার খোঁজ-খবর করতে থাকি। আমার বাবার কোন সন্ধান না পেয়ে আমার বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ইন্ডিয়ার বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নম্বর ১২৩৯, তারিখ-১৮ মে। আমরা আমার বাবাকে খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে আমার বাবাকে অপহরণ করেছে। আমার বাবাকে সম্ভব্য সব স্থানে খোঁজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে সামান্য বিলম্ব হল।’

১২ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। তিন দিন ধরে এমপির সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে জানিয়ে রবিবার (১৯ মে) গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

আট দিন ধরে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার খুন হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ভারতের কলকাতার পুলিশ। বুধবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধাননগরের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করা হয়।

এমপি আনার পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনজনকে বাংলাদেশ পুলিশ আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে দুপুরে এমপি আনারের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানায়, তারা শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিশ তাদের সহযোগিতা করছে।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি মো. আহাদ জানান, বুধবার সন্ধ্যায় শেরে-বাংলা নগর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে। এখন তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

বাবার হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ‘আমার বাবা নেই, আজ আমরা এতিম হয়ে গেছি। আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক জানান, এমপি আনার সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। তাই গোয়েন্দা পুলিশপ্রধান হারুন-অর-রশীদের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে।

সূত্রঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ