দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘটে সারাদেশ অচল হয়ে পড়েছে। জিম্মি হয়ে পড়েছে মানুষ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসা লোকজন যেমন পরিবহন ধর্মঘটের ফলে আটকে পড়েছেন ঠিক তেমনি বছর শেষে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ সেখানে আটকে পড়েছে।
পরিস্থিতি নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে নৌ পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আজ থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আলোচনায় বসার আগে ধর্মঘট প্রত্যাহার করবে না বলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়ে দিয়েছে। আগামীকাল রবিবার বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিবহন নেতৃবৃন্দের বৈঠকের আগে এ সমস্যা সমাধানের কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।
পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। বাইরের জেলা থেকেও কোনো বাস ঢাকায় পৌঁছেনি। ধর্মঘটের প্রথম দিনের মতো আজও যাত্রীদের বিভিন্ন বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে থেকে পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা এবং ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে লোকজনকে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। চরম ভোগান্তি অপেক্ষা করেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে তারা যাতায়াত করছে। সড়কে ছোট যানবাহনের চাপ আরো বেড়েছে।
আজ শনিবার সরকারি অফিসার অনেক অফিসে খুলেছে। লোকজনকে সকাল থেকেই কষ্ট করে অফিসের দিকে রওনা হতে হয়। রাজধানীর সব জায়গাতেই অফিসগামী মানুষের প্রচণ্ড ভিড় রয়েছে। কয়েক গুণ বেশি ভারাগুণে এসব অফিসগামী যাত্রীদের রিকশা সিএনজি অথবা মোটরসাইকেলে করে রওনা হতে দেখা গেছে। অফিসগামী মানুষের পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুড়তে দেখা গেছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস শ্রমিকদের। গণপরিবহন না থাকায় এবং ছোট পরিবহনে ভাড়া বেশি হওয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের পায়ে হেঁটেই রওনা দিতে দেখা যায়। ঢাকা-আরিচা, চন্দ্রা-নবীনগর ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কেও অফিসগামী মানুষের ভিড় হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছেন অফিসগামীরা। পরিবহনের দেখা না পেয়ে অনেকেই হেঁটে রওনা দিয়েছেন কর্মস্থলের উদ্দেশে। কেউবা ছুটছেন ভ্যান, রিকশা কিংবা ইজিবাইকে। যেভাবেই হোক সকাল ৮টার আগেই সবাইকে কর্মস্থলে পৌঁছতে হবে।
পোশাকশ্রমিকরা বলেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই তেলের দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে। ঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে না পারলে হাজিরা বোনাস প্রায় ৫০০ টাকা কাটা যাবে। একদিকে ভোগান্তি, অন্যদিকে হাজিরা বোনাস কাটাসহ অফিসের লোকদের মন্দ কথা শুনতে হবে।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের ফলে বছর শেষে পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাওয়া লোকজন আটকা পড়েছেন। বছরের এই সময় কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি সহ বিভিন্ন জেলায় লোকজন বেড়াতে গেছে। হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় এসব ভ্রমণপিপাসু লোকজন এখন আটকা পড়েছে।
পরিবহন ধর্মঘট নিরসনের লক্ষ্যে আগামীকাল রোববার পরিবহন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসবে বলে জানা গেছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরিবহন সেক্টরের সব অংশীজনের সঙ্গে পুরো বিষয়টা নিয়ে আলাপ করার জন্য আগামীকাল রবিবার সভা ডাকা হয়েছে। আমরা আলোচনায় বসে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আলোচনায় বসা সম্ভব হয়নি। রবিবার সমস্যা সমাধানের জন্য সভায় বসা হবে।
সূত্রঃ ভোরের কাগজ







