পৃথিবীর ইতিহাসে এক চরমতম নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট মধ্যরাতে ধানমন্ডি ৩২নং বাড়িতে।বাংলার বেঈমান, মোস্তাক, জিয়া গংদের, মদদে কিছু উচ্চ বিলাসী বিপথগামি সেনা কর্মকর্তার হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। তাদের বিদেহী আত্মার প্রতি রহিলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আজকের বাংলাদেশ যার সারাটা জীবনের জেলজুলুম সওয়া সংগ্রামী নেতৃত্বে গড়া স্বাধীন জন্মভূমি হিসেবে পেয়ে আমরা দাবড়ে বেড়াচ্ছি, তাঁর কথা ও তাঁর জীবনচর্চা সম্পর্কে আমরা আমাদের উত্তরসুরীদের জানাচ্ছি কি? আমরা নিজেরাও কতটা স্মরণার্হ হিসেবে তাঁকে স্মরণ করি? যে দেশে তাঁর সপরিবারে মৃত্যুদিবসের জাতীয় শোকের দিনেও বিএনপির চেয়ারপারসন-এর জন্মদিনের কেক কাটার ধুম দেখতে হয়, সে বড়ো গ্লানিকর। অথচ, গ্লানি যাদের বোধ করার কথা, তাদের উল্টো খুশীর করতালি।

বীরের জাতি হিসেবে আমাদের বাঙালি জাতির সুনাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসীম আত্মত্যাগের নেতৃত্বের জোরেই, সেই সত্যটি ভুলে যাওয়া কিংবা অস্বীকারের মানে বাঙালি জাতির গৌরবান্বিত ঐতিহাসিক অর্জন খাটো করেই কৃতঘ্ন হবার নামান্তর। এমন নীতিহীন রাজনীতির অনুসারীদের আজও পাকিস্তানপ্রেম গেলো না। যাবেও না। তাদের অনৈতিক রাজনীতির কারণে আজ বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনাটি সাম্প্রদায়িক উস্কানীতে বিভ্রান্ত। যারা স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে আঠারো জোটবদ্ধ তাদের মতাদর্শ বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত এদেশে শান্তি সৌহার্দ্য বিনষ্ট করার বহুবিধ অন্যায় অপপ্রচারে নিমগ্ন।

অন্যদিকে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিও আজ অনেক ম্রিয়মান বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপের কারণেই। যা খুব দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের নিজেদেরই আজ সঠিক তথ্য সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে উত্তরসুরীদের। যাতে আগামী দিনের কোমলমতি শিশু, কিশোর, কিশোরীরা জাতীয় ঐতিহাসিক ভূমিকাগুলো জেনেবুঝে চিরনমস্য জাতীয় নেতার প্রতি রোজই কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কার্পণ্য না করে।

আমাদের উচিত বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে রচিত “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” আমাদের সন্তানদের হাতে দেওয়া। যাতে বাংলাদেশের সকল শিশু জানতে পায় কি অপরিসীম আত্মত্যাগে বঙ্গবন্ধুর সারাটা জীবন কেটেছে। কি পরম ভালোবাসায়, একাগ্র সংগ্রামী নেতৃত্বে তিনি একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার প্রস্তুতি পর্বে পৌঁছিয়েছেন। তাঁর বজ্রনির্দেশে ১৯৭১-এ ৭মার্চের স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণাটির পরে অপর কোনও নির্দেশেরই প্রয়োজন পড়েনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে “জয় বাংলা” বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে অবিস্মরণীয় প্রাণবাজী গেরিলা অপারেশন পরিচালিত করে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছুতে পড়শী রাষ্ট্রের সহযোগে। অযথা আজ যেসব ভারত-বিদ্বেষী ধুয়ো তুলতে সদাতৎপর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, সেসব বস্তাপচা থিওরী আর ধর্মান্ধ অপরাজনীতির শিকার হতে দেওয়া যাবে না ভবিষ্যত শিশুদের।

আগস্ট মাসে জাতীয় শোকের মাসের এই হউক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শধারী সৈনিকদের অঙ্গীকার। তবেই হয়তো বঙ্গবন্ধুর আত্মিক আশীর্বাদ ঝরবে বাংলাদেশের উপরে। আগস্টে প্রতিবছর হৃদয় জুড়ে বঙ্গবন্ধুর অজর সেই স্বাধীনতার ডাক শুনতে পাই। যে ডাক অস্থিমজ্জাপাঁজরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমন্ত হৃদয়কে জাগ্রত করে। “জয় বাংলা” বলে আবার সেই স্বাধীনতার চেতনায় জ্বলন্ত শিখাময় শিকড়ে রক্তজলের অক্ষরে লেখা বাংলাদেশের নামটি পুনরায় লিখতে বলে।

বঙ্গবন্ধুই যে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা স্থপতি সে সত্যের জীবনাদর্শে উজ্জীবিত হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্কটকাল ঘুঁচবে না। বরং ক্রমেই স্বাধীনতাবিরোধীদের অপপ্রচারের শিকার হয়ে ধর্মান্ধ, দিকভ্রান্ত জাতিতে করুণ পরিণতির দিকে এগুবে প্রিয় বাংলাদেশ।

আমরা কি তেমন বাংলাদেশ চাইতে পারি কিছুতে?

লেখক :  ইকবাল আহমেদ লিটন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সদস্য সচিব, আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ ও অভিযোগ বার্তার প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক।