টাঙ্গাইলে শিশু ফুটবলার ধর্ষণচেষ্টা মামলার ঘটনায় অভিভাবকসূলভ মনোভাব পোষণ না করে আসামিকে সহযোগিতার অভিযোগে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আইনজীবী রবিউল হাসান রতনকে। মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

গোপালপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী গত ২৪ জুলাই ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে পুলিশ ওই দিন উড়িয়াবাড়ী গ্রামের মুদি দোকানী আলেফ শেখকে গ্রেপ্তোর করে জেল হাজতে পাঠায়। এ মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন একই গ্রামের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতন। তিনি আবার একই সঙ্গে ভুক্তভোগীর স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিরও সভাপতি।

মামলার বাদী এবং ভুক্তভোগীর মা শনিবার (২৬ আগস্ট) গোপালপুর থানায় দায়ের করা এক অভিযোগে জানান, গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাত নয়টায় আলেফ শেখ গলায় মালা পরিহিত অবস্থায় ব্যান্ডপার্টি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। ব্যান্ডপার্টির সঙ্গে তার সঙ্গে থাকা শিপন মিয়া, করিম মিয়া, আয়নাল হকসহ শতাধিক উৎসুক মানুষ যোগ দেন। তারা নেচে গেয়ে পুরো গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। একপর্যায়ে আলেফ শেখ দলবল নিয়ে বাদীর বাড়ির আঙ্গিনায় নিত্য শুরু করে। পাশাপাশি গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি দেয়। এ অবস্থায় দিনমজুর বাবা-মা অসহায় ভুক্তভোগী শিশুটিকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পুলিশের সহযোগিতা চাচ্ছেন। প্রাণ সংহারের ভয়ে বাদী গত ২৬ আগস্ট গোপালপুর থানায় প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

গোপালপুর থানার ওসি মো. জিয়াউল হক মোর্শেদ এবং হেমনগর ফাঁড়ির সাব-ইন্সপেক্টর ও ধর্ষণচেষ্টা মামলার তদন্তকারী অফিসার বশীর আহমেদ গত সোমবার তদন্ত করে বাদীর অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। গত সোমবার পুলিশ আলেফ শেখকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আলীম হোসেন জানান, শিশু নির্যাতন মামলায় যিনি আসামির আইনজীবী তিনি আবার স্কুলেরও সভাপতি। তিনি আসামির জামিন করানোর পর তার সঙ্গে মিলেমিশে গ্রামে ব্যান্ডপার্টি এনে কীভাবে উল্লাস প্রকাশ করেন, তা বুঝতে পারছি না।

ব্যান্ডপার্টির প্রধান কালিহাতী উপজেলার পশ্চিম নারান্দিয়া গ্রামের অনিক লাগাচি জানান, আলেফ শেখ গত বৃহস্পতিবার ধর্ষণচেষ্টা মামলায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তার আইনজীবী রবিউল হাসান রতনকে সঙ্গে নিয়ে তিন হাজার চারশ টাকায় তাকে ভাড়া করেন। ওই আইনজীবী ও আসামি বাদ্য বাজনার সময় নেচে গেয়ে উল্লাস করেন।

হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার বাদীকে হুমকির নিন্দা এবং শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে ভুক্তভোগীর মা গত সোমবার গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতনের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের অভিযোগ এনে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির দাবি জানান। তাছাড়া সভাপতি ভুক্তভোগীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোয় সে স্কুলে পড়ালেখার জন্য যেতে ভয় পাচ্ছে।

এদিকে ভুক্তভোগীর মায়ের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সকালে উডিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। জেলা শিক্ষা অফিসার ভুক্তভোগী এবং তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সকল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, স্থানীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেন।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ দৈনিক ইত্তেফাককে জানান, স্কুলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতন ভুক্তভোগীর ও তার পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা অনভিপ্রেত এবং লজ্জাজনক। মানবিক গুণাবলী যাদের নেই তারা কোনো শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে থাকার যোগ্যতা রাখেন না। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। দুই এক দিনের মধ্যেই নতুন কমিটি হবে। নির্দয় আচরণের জন্য অ্যাডভোকেট রবিউল হাসানকে সামনে আর সভাপতি পদে রাখা হবে না।

স্কুলের সভাপতি ও আসামি পক্ষের আইনজীবী রবিউল হাসান রতনকে মোবাইলে কল দিলে তিনি বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।

সূত্রঃ ইত্তেফাক