দেশে প্রথম বারের মতো চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। বিদ্যুত্চালিত এই ট্রেন চলবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এর টিকিটব্যবস্থা পুরোপুরিই কম্পিউটারাইজড। নতুন প্রযুক্তির এই ট্রেন আগামী ২৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনের পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে এতে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা। এ উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে ট্রেন। পরবর্তী সময়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালুর পরিকল্পনা ২০২৩ সালের শেষ দিকে। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিতাংশ চালু হতে পারে ২০২৫ সালে। সবমিলিয়ে দিয়াবাড়ী, মিরপুর ও আগারগাঁও এলাকায় এখন উত্সবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। টিকিট, স্টেশনে প্রবেশ-বের হওয়া, ওঠানামা, এমআরটি কার্ড রিচার্জ ইত্যাদি কাজের মহড়া চলছে। তারা বলছেন, দেশের সাধারণ মানুষ এ ধরনের পরিবহনে যাতায়াতে অভ্যস্ত নন। তাদের চলাচলের সুবিধার্থে ভিডিও টিউটোরিয়াল, মাইকিংসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তাব্যবস্থা : উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলে রেলে করে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করবেন। ফলে ঐ এলাকাগুলোতে নেওয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। এদিন উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের দুই পাশের সড়ক ও অবকাঠামোগুলোতে আরোপ করা হয়েছে কড়াকড়ি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তার জন্য মেট্রোরেলসংলগ্ন এলাকার বাড়ির মালিকদের সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেলসংলগ্ন এলাকার কোনো ভবন বা ফ্ল্যাটে ২৯ ডিসেম্বরের আগে নতুন ভাড়াটে উঠতে পারবে না। কোনো বাণিজ্যিক ভবনে নতুন কোনো অফিস, দোকান, রেস্তোরাঁ খোলা যাবে না। কোনো ভবনের বেলকনি ও ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়া যাবে না এবং কেউ সেখানে দাঁড়াতে পারবে না। এছাড়া মেট্রো রেলসংলগ্ন এলাকায় কারো বৈধ অস্ত্র থাকলে থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে। সেখানকার সব ব্যাংক বা এটিএম বুথ ঐ দিন সকাল থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) বদরুল হাসান বলেন, মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে এসএসএফের তরফ থেকে কিছু নির্দেশনা পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে। এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত মেট্রোরেলসংলগ্ন এলাকার ভবনের বাসিন্দাদের জন্য সাতটি নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল হালিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মেট্রোরেলসংলগ্ন এলাকায় নির্দেশনা সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য পল্লবী ও তুরাগ থানাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

স্মৃতিস্তম্ভ :নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িয়ে আছে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজানে নারকীয় জঙ্গি হামলার মতো এক হূদয়বিদারক ও রক্তক্ষয়ী ঘটনাও। ঐ হামলায় জঙ্গিদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২০ নাগরিক। এর মধ্যে নিহত সাত জাপানি নাগরিক মেট্রোরেল প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। তাই তাদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের উপপ্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন) মৌসুমী হাবিব জানান, উত্তরার দিয়াবাড়ী মেট্রোরেল স্টেশনে নির্মাণ করা হয়েছে এই মেমোরিয়াল মোমেন্ট বা স্মৃতিস্তম্ভ। উদ্বোধনের পর যা উন্মুক্ত করা হবে। এছাড়া ট্রেনে না চড়েও দিয়াবাড়ী স্টেশনে টিকিট কেটে সোমবার থেকে শনিবার মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্র দেখতে পারবেন যে কেউ।

মেট্রোরেল চলবে চার ঘণ্টা, চালু থাকবে দুই স্টেশন

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পর কিছুদিন মেট্রোরেল দিনে চার ঘণ্টা করে চলাচল করবে। এজন্য পাঁচটি ট্রেন থাকবে। তবে এরই মধ্যে ১২টি ট্রেন পরীক্ষানিরীক্ষা করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুরুর দিকে পাঁচটি ট্রেনের বেশি প্রয়োজন হবে না। মাস তিনেক পর হয়তো সবগুলো ট্রেন চলাচল শুরু করবে।

কর্মকর্তারা আরো জানান, প্রথম দিন মাত্র দুটি স্টেশন খুলে দেওয়া হবে। একটি উত্তরা উত্তর অন্যটি আগারগাঁও স্টেশন। মেট্রোরেলের ধারণা, আমাদের জন্য একেবারেই নতুন, তাই শুরুতে যাত্রীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও আছে। পরে যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী এক এক করে অন্য স্টেশনগুলো খোলা হবে।

সূত্রঃ ইত্তেফাক