চট্টগ্রামের নাগরিকদের সেবা প্রদানকারি দুটি সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন( চসিক) এর মধ্যে উন্নয়ন কাজে সমন্বয়তো দূরের কথা বরং দিন দিন একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোধাগার যেন বেড়েই চলেছে। অথচ এই দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রধান দুই কর্তাব্যক্তি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
চসিক চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে রয়েছেন, অপরদিকে চউক চেয়ারম্যা জহিরুল আলম দোভাষ নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু বর্তমান সরকারি দলের এই দুই নেতা চট্টগ্রামের দুটি প্রধান উন্নয়ন ও সেবাদানকারী সংস্থার প্রধান হলেও সংস্থা দুটোর রেষারেষির কারণে চট্টগ্রামের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন যেমন হচ্ছে না তেমনি নাগরিকরাও প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিশেষ করে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয় নিয়ে এই দুই সংস্থার প্রধানরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোধাগার করেই যাচ্ছেন। অথচ বিভিন্ন সভায় তারা বলেছিলেন যে, একে অপরের সাথে সমন্বয় করেই জলাবদ্ধতা নিরসন সহ নগরীর অন্যান্য উন্নয়ন কাজ করবেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
এমনকি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতিতে এই দুই সংস্থার প্রধানদেরকে এই পরস্পর দোষারোপ থেকে বের হয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করার অহ্বান জানিয়েছেন। নগরবাসীও তেমনটাই আশা করে। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। চট্টগ্রামের মেয়র পদটি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপূর্ণ পদ এবং তিনি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার কথা। কিন্তু তার কোন প্রতিফলন চট্টগ্রামবাসী দেখছেনা।
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিককালে প্রবল বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে নগরীতে সৃষ্ট জলজট বা জলাবদ্ধতার জন্য চসিক মেয়র মো. রেজাউর করিম চৌধুরী প্রকাশ্যেই দুষছেন চউককে। তিনি বলেছেন, চউক জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য যেসব খাল খনন করেছে সেগুলো থেকে মাটি ঠিকমতো অপসারনসহ অন্যান্য কাজগুলো সম্পন্ন না করাতেই নগরীতে জলাবদ্ধতা ও নাগরিক দুর্ভোগ হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নগরীল বহদ্দারহাটে অবস্থিত মেয়রের বাড়িও পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল।
এদিকে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এক সংবাদ সম্মেলনে উল্টো অভিযোগ করে বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে চসিক মেয়র ভুল তথ্য দিয়ে চউক’কে দোষারোপ করছেন।
পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা নগরীর নালা-নর্দমাগুলো ঠিকমতো পরিস্কার না করার কারণেই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্প বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অযোগ্য বলেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (চউক) কাজ দেয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে চউক সম্মেলনে কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার জন্য সব দায় চউক’কে দেয়া হচ্ছে। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের অধীন খালগুলো পরিস্কার করা হয়েছে।
তবে ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা নগরীর নালা-নর্দমাগুলো পরিস্কার না করাতেই নগরীর নতুন নতুন এলাকা জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়েছে। জলাবদ্ধতার জন্য কোনো কোনো সংস্থা ভুল তথ্য দিয়ে চউককে দোষারোপ করছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে চউক’র কোন গাফিলতি নেই। জলাবদ্ধতা নিয়ে সম্প্রতি একটি স্থানীয় পত্রিকায় চউকের বিরুদ্ধে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর দেয়া বক্তব্যকে মিথ্যা বলে দাবি করেন চউক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে, সবাই মনে করেছে সব দায় চউকের। মূলত সিটি কর্পোরেশন জলাবদ্ধতার কাজ করতে না পারায় চউক’কে প্রকল্প দেয়া হয়। চউক শুধু একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মেয়র সাহেব ভুল তথ্য দিয়ে চউক’কে দোষারোপ করছেন।
চউক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের যোগ্য না- চসিক মেয়রের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চউক চেয়ারম্যান দোভাষ বলেন, চউক যোগ্য না হলে সরকার প্রকল্প দিয়েছে কেন? বরং তারা যোগ্য নয় বলে তৎকালীন সময়ে চউক’কে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেন, আমারা কোনো সংস্থা বিরুদ্ধে না বা কোনো সংস্থাকে দোষারোপ করছি না। আমরা শুধু কি কাজ তা জানাচ্ছি। স্লুইগেইট বসানোর কারণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এবার পানি উঠেনি। যদিও সেখানে অস্থায়ী গেইট বসানো হয়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, প্রকল্প হাতে নেয়ার পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি হয়। চট্টগ্রাম নগরে প্রায় ৫৭টি খাল রয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রকল্পে রয়েছে ৩৬টি খাল। ৩৬টি খালের সম্প্রসারণ চলছে, কিন্তু বাকি ২১টি খালে সমপ্রসারণ করা হয়নি। যা আমাদের প্রকল্পের আওতাভুক্ত না। যার জন্য জলাবদ্ধতা হতে পারে।
সেনাবাহিনীর বাস্তবায়নাধীন ৩৬টি খালের মধ্যে ২৬টি খালের কাজ প্রায় শেষ। বাকি ১১টি খালের কাজ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে। ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলে আমরা কাজ শেষ করতে পারবো। পানি নিষ্কাশনের জন্য সবগুলো খালের কাজ করতে হবে। এজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে।
তিনি বলেন, নগরে জলাবদ্ধতা কমাতে হলে খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, নগরের ছোট বড় প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার নালা রয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে মাত্র ৩০২ কিলোমিটার নালা। বাকি নালাগুলোতে কাজ করতে হবে। সবগুলো নালা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
সূত্রঃ ভোরের কাগজ
Aninda, Sub-Editor