চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতারণার মাধ্যমে কিডনি চুরির অভিযোগে দুই চিকিৎসকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মো. আবু বক্কর নামে এক কৃষক। রবিবার (১৪ জুলাই) চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়ার আদালতে এই মামলা করা হয়।

মামলার আসামিরা মীরসরাই উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও নগরীর খুলশী থানার চিটাগাং আই ইনফর্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স স্টাফ কোয়াটারে বসবাস করেন।

আসামিরা হলেন ডা. রাজিব হোসেন, তার পিতা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রবিউল হোসেন ও তার মা খালেদা বেগম।

মামলার বাদীর আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতারণা করে এক কৃষকের কিডনি চুরির অভিযোগে দুই চিকিৎসকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্টো ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদী মো. আবু বক্কর বাড়িতে কৃষিকাজ ও পশু লালন-পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ডা. রাজিব হোসেনের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় ২০১২ সালে চিটাগাং আই ইনফর্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স স্টাফ কোয়াটারে বাসায় নিয়ে গিয়ে ডা. রবিউলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

এসময় সিঙ্গাপুরে ডা. রবিউলের চিকিৎসা করার জন্য তাদের একজন অ্যাটেন্টডেন্ট প্রয়োজনের কথা জানানো হয় আবু বক্করকে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তখন আবু বক্কর তাদের সঙ্গে অ্যাটেন্টডেন্ট হিসেবে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হলে পাসপোর্ট ও ভিসাসহ যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করে ২০১২ সালে ১০ মার্চ ডা. রবিউল হোসেন, তার স্ত্রী খালেদা বেগম, ডা. রাজীব হোসেনসহ তিনি সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে পৌঁছে ডা. রবিউলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডা. রাজিব, তার মা খালেদা ও মামলার বাদী আবু বক্কর হোটেলে অবস্থান করেন।

পরে ডা. রাজিব হোসেন মামলার বাদীকে জানান যে, তার বাবার অবস্থা ভালো না। তাকে সুস্থ করতে হলে যেকোনো মানুষ থেকে কিছু টিস্যু দিতে হবে। এসময় টিস্যু দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না বলে আশ্বস্ত করে বাদীকে টিস্যু দেওয়ার অনুরোধ করেন ডা. রাজিব।

মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বক্কর মানবিক বিবেচনায় টিস্যু দিতে রাজি হন। পরে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার পর ডা. রবিউলের সঙ্গে বাদীর টিস্যুর মিল আছে জানিয়ে বক্করকে অপারেশনে রাজি করানো হয়।

একই বছরের ৩ এপ্রিল বক্করকে হাসপাতালে ভর্তির পর অপারেশন করা হয়। ৯ এপ্রিল বক্করকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়। একই বছরের ১৫ এপ্রিল বক্করকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাদী টিস্যু দিয়ে জীবন বাঁচানোর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাকে আসামিদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং আই ইনফর্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্সে চাকরি দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফিজিক্যাল আনফিট দেখিয়ে বক্করকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর দিনে দিনে বক্কর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

২০২৪ সালের ২১ মে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি আলট্রাসনোগ্রাফি করান। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তাকে চিকিৎসক জানান, তার ডান কিডনি নেই। চিকিৎসক মতামত দেন, সার্জারির মাধ্যমে তার ডান কিডনি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিডনি সরিয়ে ফেলার বিষয়টি জানার পর বক্কর আসামিদের কাছে গেলে তাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাউকে বিষয়টি না জানাতে অনুরোধ করা হয়। কয়েকবার টাকার দেওয়ার তারিখ দেওয়ার পরে টাকা দেয়নি আসামিরা। গত ১৩ জুন বক্কর আসামিদের কোন টাকা না দিয়ে বাসায় গেলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

সূত্রঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ