উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে দেশের ১১ জেলার ৭৭ উপজেলা। এমন পরিস্থিতিতে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র। আজ শনিবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক জরুরি বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, কাপ্তাই লেকের পানির উচ্চতা আজ বিকেল ৩টায় ১০৭ দশমিক ৬৬ ফুট এমএসএল, যা বিপৎসীমার কাছাকাছি হওয়ায় লেকের উজান ও ভাটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে আজ রাত ১০টায় স্পিলওয়ের ১৬টি গেট ছয় ইঞ্চি পরিমাণ উঠিয়ে পানি নিষ্কাশন শুরু করা হবে। এতে নয় হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হবে।

আরও জানানো হয়, বর্তমানে লেকের ইনফ্লো ও বৃষ্টিপাত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইনফ্লো বেশি হলে, অর্থাৎ পানির লেভেল অস্বাভাবিক বাড়লে স্পিলওয়ে গেট খোলার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। বর্তমানে পাঁচটি ইউনিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, যার ফলে ৩২ হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে।

এদিকে বাঁধ থেকে পানি ছাড়া হলে এর প্রভাব আশপাশের এলাকায় পড়তে পারে সেজন্য এরই মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানান কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের। তিনি বলেন, আজ দুপুর ৩টায় কাপ্তাই লেকের পানি ১০৭ দশমিক ৬৬ ফুট এমএসএল ছিল। কাপ্তাই লেকের উজান এবং ভাটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আজ রাত ১০টায় লেকের ১৬টি গেট (স্পিলওয়ে) ছয় ইঞ্চি পরিমাণ খুলে দেওয়া হবে। এতে প্রতি সেকেন্ডে নয় হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হবে।

তিনি আরও জানান, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট চালু রাখার জন্য এমনিতেই ৩২ হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে।

কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ায় বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিট থেকে ৪৬ মেগাওয়াট, ৩ নম্বর ইউনিট থেকে ৪৯ মেগাওয়াট এবং ২, ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিট থেকে গড়ে ৪০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি ও নানান বাস্তবতার কারণে এখন আর সর্বোচ্চ ২৪৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।

পানি ছাড়ার আগেই ‘জরুরি বার্তা’ চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌবাহিনীর কাপ্তাই ও চট্টগ্রাম ঘাঁটি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দুপুরে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি ছাড়ার বার্তা পেয়েছি। সেই অনুযায়ী রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তবে রাঙ্গুনিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জিগারুল ইসলাম বলছেন, সাধারণত কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেইট খুলে দিয়ে ছয় ইঞ্চি করে পানি ছাড়া হলে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাবই পড়ে না রাঙ্গুনিয়াতে। যদি এটি দেড় বা দুই ফুট উচ্চতায় ছাড়া হয়, তখন নদীর পাড়ের কিছু বসতবাড়ি ডুবে যায়। এবং এর প্রভাব পড়ে রাউজান ও বোয়ালখালির কিছু কিছু এলাকায়।

সূত্রঃ ইত্তেফাক