দেশে সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও যেকোনো সময় আরেকটি ঢেউ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থায় নতুন করে আতঙ্কের কারণ হয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব থেকে করোনা ভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাবে। বাংলাদেশে এখনো ভাইরাস বিদ্যমান। তাই সংক্রমণ কমায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি সবার মেনে চলতে হবে। কিন্তু দেশে বর্তমানে কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতা বড় বিপদ ডেকে আনবে। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ইতালিতে করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে। করোনা মোকাবেলায় অস্ট্রিয়ায় পূর্ণ লকডাউন চলছে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার প্রেক্ষিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসলে সেটা হবে ভয়ঙ্কর। যা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। দেশের সার্বিক উন্নয়নও ব্যাহত হবে।

দেশে করোনা ভাইরাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। করোনার টিকাও দেওয়া হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে নরমাল চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। সব ধরনের মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেকে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন, মনে করছেন- করোনা দেশ থেকে চলে গেছে। কিন্তু দেশে করোনা এখনো নির্মূল হয়নি। তারপরও সরকারি-বেসরকারি অফিসে কিংবা মার্কেট, দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, মাস্ক পরছে না। জনসমাগম, রাজনৈতিক সমাবেশেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। অথচ টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সব কাজ করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২১ কোটি ডোজ টিকা ক্রয় করেছে। এরমধ্যে ১১ কোটি ডোজ টিকা দেশে এসেছে। ৯ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে টিকা দেওয়া হচ্ছে প্রায় তিন কোটি। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে ১৬ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। একদিনে সর্বোচ্চ টিকা দেওয়া হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন ৮০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ এবং ৬৫ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৪ কোটি মানুষের। আগামী বছর দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু হবে। তখন টিকা হাতের কাছেই পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেশে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনার টিকার কোনো সমস্যা নেই। টিকা আসছে, সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। তবে টিকা গ্রহণের পাশাপাশি সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সংক্রমণ কমে গেছে বলে আত্মতৃপ্তিতে থাকার সুযোগ নেই। যেকোনো সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে। তিনি বলেন, দেশে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোই কমে এসেছে। অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটা ধরে রাখতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ যেন মনে না করে যে, দেশ থেকে করোনা চলে গেছে। করোনা কখন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে সেটা কেউ বলতে পারে না। তাই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। একই সঙ্গে করোনার টিকা নিতে হবে। তাহলে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। আর স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসবে, আর সেটা হবে মারাত্মক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ব্রিফিং করে বলে যাচ্ছি যে, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নইলে করোনা আবার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। সবাইকে চিঠি দিয়েও বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ মানে না। এই পরিস্থিতিতে দেশে যেকোনো সময় করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, দেশে যেকোন সময় করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে। তাই সংক্রমণ কম থাকায় আত্মতৃপ্তিতে থাকার সুযোগ নেই। দেশে সংক্রমণ কমলেও নির্মূল হয়নি। শীতকালে করোনার প্রভাব বেশি থাকে। তাই করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

সূত্রঃ ইত্তেফাক