চট্টগ্রাম মহানগর আকমল আলী রোডের স্লুইচগেট এলাকা। বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টা। আকাশে কড়া রোদ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একদল সদস্য এবং কয়েকশত মানুষের জটলা। অদূরে গামছা মোড়ানো দুটি বস্তু। নিহত শিশু আয়াতের পায়ের খন্ডাংশ। অদূরে বিধ্বস্ত, ক্লান্ত বাবার আকুল আবেদন, ‘আমার মেয়ের মাথাটা খুঁজে দাও। শেষবারের মতো বুকে জড়িয়ে রাখতে চাই।’
গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার মেয়ে আলীনা ইসলাম আয়াতকে অপহণের পর হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ ছয় টুকরো করে সাগরে ও খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সোহেল রানার বাড়ির ভাড়াটিয়া আবির মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয় পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে আবির শিশুটিকে অপহরণ করেন বলে পিবিআইয়ের ভাষ্য। পরে আবির শিশুটিকে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরো করেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন।
পুলিশ কয়েকদিনের চেষ্টায় পায়ের দুটি খন্ডাংশ উদ্ধার করে, যা নিহত আয়াতের বলে পুলিশের ধারণা।
বাবা সোহেল পিবিআই কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘পিবিআই অনেক কষ্ট করছে। যদি আরেকটু কষ্ট করে মেয়ের মাথাটা একটু খুঁজে দেয়। মেয়ের মাথাটা শেষবারের মতো বুকে জড়িয়ে রাখতে চাই। আমি শেষবারের মতো আমার আয়াতের মুখটা একটু দেখব। তার মুখটা কত সুন্দর। ওই মুখ দিয়ে সে আমাকে বাবা ডাকত। আরবি পড়ত। কী নিষ্পাপ মেয়েটা আমার! আমি তার মুখটা একটু দেখব।’
মেয়ের উদ্দেশে সোহেল ক্লান্ত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘তোমাকে খুব কষ্ট দিয়ে মারছে। একটু পানিও তোমাকে দেয়নি। আমাকে আর কেউ বলবে না, বাবা আমাকে এটা কিনে দাও, ওটা কিনে দাও। এই জীবনে আমাকে আর কেউ বাবা ডাকবে না বাবা।’
গ্রেপ্তার আবির মিয়ার বর্ণনা আনুযায়ী পুলিশ বলছে, ওই স্লুইচ গেটে আয়াতের দুটি পা ও মাথাসহ তিনটি অংশ ফেলেছিলেন আবির। গত দুই দিন ধরে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভাটার সময় সেখানে উদ্ধার অভিযান চালায় পিবিআই।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের বিশেষ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, ‘স্লুইচ গেইটের ভেতরে ঢুকে আবর্জনাগুলো সরিয়ে তল্লাশি অভিযান চলে। প্রথম দিন কিছু পাইনি। দ্বিতীয় দিনে চতুর্থ প্রকোষ্ঠের ভেতর থেকে দুটি পায়ের অংশ পাওয়া যায়। এগুলো পলেথিনে ভরে স্কচ টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। আসামির তথ্য অনুযায়ী, পা ও মাথার তিনটি অংশ এখানে ফেলা হয়। তাই মাথার সন্ধানে বৃহস্পতিবার অভিযান চলবে। পায়ের দুটি অংশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
পিবিআই নিয়োজিত ১০ শ্রমিক পানিতে নেমে এই তল্লাশি চালায়। তাদের একজন তাজুল ইসলাম। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দুই দিন ধরে স্লুইচ গেটের ভেতরে ঢুকে আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। আজ শেষ মুহূর্তে দুটা অংশ পেয়েছি। আগামীকাল এসে মাথা খুঁজব।’
মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই আয়াতকে অপহরণ করা হলেও তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে তার কারণ এখন নিশ্চিত না পুলিশ। তবে পুলিশ ধারণা করছে, শিশুটিকে লুকিয়ে রাখতে না পেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সূত্রঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ
Aninda, Sub-Editor