সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রোববার শুরু হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। অসহযোগের প্রথম দিনে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে সারাদেশে অন্তত ৫২ জন মারা গেছেন।

এর মধ্যে রাজধানীতে ৫, রংপুরে ৫, মুন্সিগঞ্জে ৪, নরসিংদীতে ৬, পাবনায় ৩, সিরাজগঞ্জে ৪, মাগুরায় ৩, কিশোরগঞ্জে ৪, বগুড়ায় ৪, কুমিল্লায় ৩, সিলেটে ২, ভোলায় ১, জয়পুরহাটে ১, বরিশালে ১, সাভারে ১ ও ফেনীতে ৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

রাজধানী ৫

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলে । এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব এই প্রকৌশলী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য।

জিগাতলায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী।

আব্দুল্লাহ পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকার কলতা বাজারের বাসিন্দা। তার বাবার নাম আবু বকর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। তিনি মহাখালীর ডিএইট কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তৌহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে, অসহযোগ আন্দোলন, নিহত ৫২

ছবিঃ সমকাল

এদিকে মিরপুরে সংঘর্ষ চলাকালে মিরাজ হোসেন (২৩) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আজমল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অন্দিরা সমকালকে জানান, বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই যুবক মারা যান। তিনি মিরপুর ৬ নম্বরের এ ব্লকে থাকতেন।

বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লায়। প্রাথমিকভাবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

উত্তরায় শিক্ষার্থীদের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ

ছবি: সমকাল

এদিকে মিরপুরে সংঘর্ষ চলাকালে মিরাজ হোসেন (২৩) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আজমল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অন্দিরা সমকালকে জানান, বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই যুবক মারা যান। তিনি মিরপুর ৬ নম্বরের এ ব্লকে থাকতেন।

অপরদিকে বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

মুন্সীগঞ্জ ৪

মুন্সীগঞ্জ শহরের থানারপুল চত্বরে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে রোববার সকাল ১০টার দিকে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ইসলাম (৩৫), মেহেদি হাসান (৩২), মো. সজল (২২)। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি মোটরসাইকেল।

রংপুর ৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে রংপুরের রাজপথে মানুষের ঢল নামে। সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিনে সিটি বাজারে সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন।

মাগুরা ৩

মাগুরা শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হন। এ সময় ফরহাদ হোসেন (২৩)। তার বাবা রাম গোলাম রসুল। ফরহাদ শ্রীপুরের রায়নগর এলাকার বাসিন্দা। এ সময় রোববার সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন।

কুমিল্লা ৩
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেবিদ্বারে একজন নিহত হয়েছেন। আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবদুল্লা রুবেল (৩৩)। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তিনি বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে। এছাড়াও দুই পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছে।

অসহযোগ আন্দোলন, নিহত ৫২

ছবিঃ সমকাল

পাবনা ৩
পাবনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বিচার ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রোববার বেলা ১টার দিকে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম রিমন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- পাবনা সদরের চর বলরামপুরের জাহিদুল ইসলাম (১৮) ও পাবনা শহরের আরিফপুর হাজীরহাট এলাকার মাহিবুল হোসন (১৬)।

সিলেট ২
সিলেটের গোলাপগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর গুলিতে দু’জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক লোক।

রোববার দপুর আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গুলিতে তারা নিহত হন। নিহতরা হলেন-ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।

কোটা সংস্কারের আন্দোলন ১৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে ১৫ জুলাই। এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে পুলিশসহ ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হন তিন শতাধিক। পরের দিন (১৬ জুলাই) ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জনের মৃত্যু হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু সহিংসতার তীব্রতা ও ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। এ দিন মৃত্যু হয় ২১ জনের। সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটে ১৯ জুলাই, এ দিন মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। এর মধ্যে রাজধানীতেই প্রাণ হারান ৪৯ জন।

সূত্রঃ সমকাল