জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
শনিবার (১৬ মার্চ) বেলা ৩টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ ঘটনায় ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে আজও বিক্ষোভ করেন অবন্তিকার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
ছয় দফা দাবিগুলো হলো—
১. ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
২. অভিযুক্ত আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
৩. জরুরি সিন্ডিকেট আহ্বান করে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে।
৪. ভিকটিমের (অবন্তিকার) পরিবারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে।
৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেল কার্যকর করতে হবে।
দাবি পূরণ না হলে আগামী সোমবার বেলা ১১টায় উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে সহকারী প্রক্টর ও আম্মান সিদ্দিকী নামে এক সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন ফাইরুজ অবন্তিকা নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামে ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে।
শুক্রবার রাতে ফাইরুজ আবন্তিকার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও ক্যাম্পাসের ভেতর টায়ার জ্বালিয়ে আন্দোলন করেন।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্যের নির্দেশে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
একইসঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ, সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাস। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ঝুমুর আহমেদ।
শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পরপরই উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম রাত ১টার দিকে ক্যাম্পাসে এলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তখন ড. সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় ঘোষণা দেন।
এ সময় এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত কর্মদিবস সময় নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আগামী ১২ ঘণ্টায় মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানান। একইসঙ্গে রাতের মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিসহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতির কারণে অভিযুক্তরা পার পেয়ে গেছেন। তাই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
এর আগে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা জেলা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। পরে তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা চেষ্টার আগে ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে এ ঘটনার জন্য সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন।
সূত্রঃ নিউজ 24
Aninda, Sub-Editor