Home মুক্তচিন্তা গাজায় মানবিক বিপর্যয়: নীরব পৃথিবীর সামনে এক রক্তাক্ত প্রশ্ন

গাজায় মানবিক বিপর্যয়: নীরব পৃথিবীর সামনে এক রক্তাক্ত প্রশ্ন

26
0
গাজায় মানবিক

গাজা আজ রক্ত, ধুলো আর ধ্বংসস্তূপের শহর। প্রতিদিনের বোমাবর্ষণ আর সংঘর্ষে এই ছোট্ট উপত্যকাটি পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মঞ্চে। হাজারো পরিবার আশ্রয় হারিয়েছে, খাদ্য ও ওষুধের অভাবে শিশু, বৃদ্ধ আর নারীরা মৃত্যুর প্রহর গুনছে। অথচ সভ্যতার দম্ভে ভরা এই বিশ্ব প্রায় নীরব দর্শক।

জাতিসংঘের হিসাবে গাজার ২০ লাখ মানুষের প্রায় ৮০ শতাংশ এখন মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। ভাবুন তো, একটি গোটা জনপদ আজ কেবল টিকে থাকার যুদ্ধ লড়ছে—পানি নেই, খাবার নেই, চিকিৎসা নেই। একজন স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদের কথায়:

“আমরা প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছি, তবুও বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” এই আর্তনাদ কেবল আহমেদের নয়, গোটা গাজারই প্রতিচ্ছবি।

বিশ্ববাসী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরাইল নিরবচ্ছিন্ন সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কার্যকর সহায়তা পৌঁছাতে ব্যর্থ। বিদ্যুৎহীন হাসপাতালগুলোতে অপারেশন প্রায় বন্ধ, চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়েছে, গর্ভবতী নারীদের প্রসব এখন জীবনের জন্য এক দুঃস্বপ্ন। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত গাজার প্রায় ১৯ থেকে ২১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই দৃশ্য আমরা কতদিন কেবল সংবাদ শিরোনাম হিসেবে পড়ে যাব? ফ্রান্স সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। তবে কেবল স্বীকৃতি নয়, জরুরি এখন কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ। কেননা প্রতিটি দিনের বিলম্ব মানে আরও শত শত শিশুর মৃত্যু, আরও পরিবার ধ্বংস।

আমার মতে, গাজা আজ পৃথিবীর বিবেককে প্রশ্ন করছে। মানবাধিকার, শান্তি, উন্নয়নের যে বড় বড় বুলি আমরা শুনি, তা কি গাজার মানুষের কাছে কোনো অর্থ বহন করে? যদি বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো এখনই উদ্যোগ না নেয়, তবে ইতিহাস একদিন তাদের এই নীরবতাকে ক্ষমা করবে না।

— রিজভী মাহমুদ, রিপোর্টার, ইনিউজ আপ ডট কম