তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থা তাকে আটক করেছে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের গেটের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি।
তবে ঘটনাটি নিশ্চিত করে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, রাসুর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, একাধিক হত্যা মামলাসহ মোট ১৩ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি মামলায় সম্প্রতি সে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়। সর্বশেষ ১টি মামলার জামিনের কাগজপত্র বুধবার কারাগারে পৌঁছে। জামিনের আদেশটি যাচাই-বাছাই করার পর তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টা ৪০ মিনিটে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল গেটের সামনে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস দাঁড়ানো ছিল। ফ্রিডম রাসু জেল গেট থেকে বের হওয়ার পর সাদা পোশাকের ২-৩ জন ব্যক্তি তাকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে মাইক্রোবাসে চড়েন। এরপরই মাইক্রোবাসটি দ্রুতবেগে জেলগেট এলাকা ত্যাগ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মগবাজারের টিএন্ডটি কলোনীতে বেড়ে ওঠা খোরশেদ আলম রাসু ছিলেন ফ্রিডম পার্টির সদস্য। আশির দশকের শেষের দিকে ফ্রিডম পার্টির কর্নেল ফারুকের নেতৃত্বে দোর্দন্ড প্রতাপশালী গ্রুপ ছিল শাজাহানপুরের ফ্রিডম মানিক ও মগবাজারের ফ্রিডম রাসু। ১৯৮৮ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ফ্রিডম মানিক, ফ্রিডম রাসুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালায়।
পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ফ্রিডম রাসুর আধিপত্য বেড়ে যায় গোটা রাজধানীতে। ধানমন্ডি, কলাবাগান, মগবাজার, রামপুরা, মালিবাগ ও রমনা এলাকা ফ্রিডম রাসু-ফ্রিডম মানিকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিজয়নগরে একজন রাজনৈতিক নেতার অফিসে ফ্রিডম রাসু, ফ্রিডম মানিক, ফ্রিডম সোহেল, জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান ও মিরপুরের কেরামতের উপস্থিতিতে ‘ফাইভ স্টার’ গ্রুপ গঠিত হয়।
এই ফাইভ স্টার গ্রুপের বিপরীতে কাওরান বাজারের পিচ্চি হান্নান ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপ গঠন করে। মূলত এই দুই গ্রুপ গোটা রাজধানীর এলাকা ভাগ করে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে রাখত। ওই সময় খিলগাঁও ঝিলপাড়ে একটি মাছের ঘের নিয়ন্ত্রণ করত রাসু। ওই মাছের ঘেরে ঢাকার পূর্বাঞ্চল সব সন্ত্রাসীদের আড্ডা হত। ওই আড্ডায় জিসান, উপল, কেরামত, ইসতিয়ার থেকে শুরু করে অনেক গডফাদার অংশ নিত।
২০০১ সালের ২৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে। এদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তালিকার প্রথম ৮ জনের জন্য ১ লাখ টাকা করে এবং তালিকার শেষ ১৫ জনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু ছিল তালিকার ৬ নম্বরে।
২০০৩ সালের ১৫ মে রাতে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবির ইন্সপেক্টর নুরুল আলম শিকদার এবং এস আই আলমগীর হোসেনকে হত্যা করে শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম রাসু ও জিসান আলোচনা আসে। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ধানমন্ডির আবাহনী খেলার মাঠের পাশ থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে। তার ফাইভ স্টার গ্রুপের অন্যতম সদস্য শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান পাড়ি জমায় দুবাইয়ে।
সূত্রঃ ইত্তেফাক
Aninda, Sub-Editor