রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম মারা গেছেন। তিনি কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা। নিহতের ভাগ্নে তারেক হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারেক হাসান জানান, আতাউর রহমান রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ভবনটিতে কফি খেতে গিয়েছিলেন। অগ্নিকাণ্ডে সময় অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে শ্বাসরোধ হয়ে ওনার মৃত্যু হয়।
অ্যাডভোকেট শামীমের সঙ্গে থাকা নূরুল আলম জানান, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তারা দুজন একসঙ্গে করে হোটেল ক্যাপিটেল থেকে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কফি খেতে যান। সেখানে যাওয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মাথায় রেস্টুরেন্টের নিচের দিকে কালো ধোঁয়াসহ কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান। পরে তারা প্রথমে নিচে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। পরে সিঁড়ি বেয়ে তারা উপরে উঠতে থাকেন।
নূরল আলম আরও জানান, এ সময় ভিড়ে শামীমকে হারিয়ে ফেলি। হেলিপ্যাডের মাধ্যমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও শামীম মারা যান।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম রাজনৈতিক জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা দপ্তর সম্পাদক ও ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।
এর আগে এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এতে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটি সাততলা। এর নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত পুরোটাই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে নিচতলায় একাধিক কাপড়ের দোকান ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্যের যন্ত্রাংশ বিক্রি হয়। দ্বিতীয় তলা থেকে শুরু করে ওপরের দিকে কাচ্চি ভাই, কেএফসি ও পিৎজা ইনসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, নিচতলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। আটকেপড়াদের অনেকে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। তারাই মূলত সেখানে আটকা পড়েন। এই অবস্থায় ভবনের তিনতলা এবং সাততলায় আটকেপড়া ব্যক্তিরা উদ্ধারের আকুতি জানাতে থাকেন।
বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান। আর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, এই অগ্নিকাণ্ডে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আরও একজন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সংবাদ পেয়ে আমি দ্রুত চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দ্রুত আসতে বললেন। এখানে এসে যা দেখলাম তা ভয়াবহ অবস্থা। বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। অপর দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন। তাদের বেশির ভাগের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা বেঁচে আছেন তাদের বাঁচি রাখার চেষ্টা করছি। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। বাইরে কেউ আছে কি না এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢামেকে ১৪ জন ও বার্নে আহতের সংখ্যা ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয় ৪২ জনকে। তাদের মধ্যে চার শিশু ও ২১ নারী ছিলেন। বাকিরা পুরুষ। এ ছাড়া জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
Aninda, Sub-Editor