বিভিন্ন দেশে লোক শ্রমিক পাঠানোর নামে অর্ধশত লোকের কাছে প্রায় কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছাড়া মোঃ সাইফুল ইসলাম।

কাশ্মির ট্রাভেলস নামে রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত অনুমতি বিহীন এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম, পিতাঃ ইমরান মিয়া, মাতা- আরবচান বেগম,  পাসপোর্ট নং- A11385215   সাইফুল ইসলামে গ্রামের বাড়ী ব্রাম্মনবাড়ীয়া সদরের বেহায়ের নামক এলাকায়।

সাইফুলের হেনস্তা ও প্রতারনার কাহিনী:

১৯৯৭ সালে জন্ম সাইফুল ইসলাম কাতার, উজবেকিস্তান, রাশিয়া ইত্যাদি দেশে শ্রমিক নিয়োগের নাম করে প্রায় ৫০ জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে শুধু মাত্র কাতারে পাঠিয়েছেন ৪জন। তাদের মধ্যে ২জন প্রায় ৬/৭ মাস ঘুরে ঘুরে ও হেনস্তার শীকার হয়ে গত ২মাস হলো কাতারে জীবিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর আজ অবদি তাদের কোন কাজ দেয়া হয়নি। একটি রুমে রাখা হয়েছে। তাদের সাথে নানা রকমের খারাপ আচরণ ও হুমকি দিয়ে তাদের খাওয়া ও থাকার টাকা দেশ থেকে নিতে হয়েছে। তাদের বাবা কৃষক, জমি বন্ধক রেখে তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। এখন তারা কিভাবে টাকা পাঠাবেন? আবারো ধারদেনা করে টাকা পাঠাতে হচ্ছে এবং মাসে মাসে দিতে হচ্ছে সুদ, শুধুমাত্র তাদের নিরাপত্তার জন্য।

যারা কাতারে একরকম বন্দী অবস্থায় আছেন তাদের নাম নাজমুল হোসেন ও মোঃ মাসুম। তারা সেখান থেকে ভিডিও কলে আমাদের প্রতিবেদককে তাদের নির্মম কাহিনী জানান। তারা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। তাদেরকে নাকি হুমকিও দেয়া হয়েছে যে জনপ্রতি আরো ৩ লক্ষ টাকা না দিলে তাদের কাজের পারমিট দিবেনা।

প্রতারণায় অভিযুক্ত সাইফুল

এছাড়াও বাকিরা সাইফুল ইসলাম কে টাকা দিয়ে প্রতিদিন তার অফিসে ধরণা দিচ্ছেন। কখনো তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকে, কখনো অফিস স্টাফকে পেলেও তাদের কাছ থেকে সমাধান মুলক কোন তথ্য তারা পাননি, উল্টো শুনে আসছেন সেই স্টাফ রাও ৩/৪ মাস যাবত কোন বেতন পাচ্ছেন না।

ইনিউজ আপ এর প্রতিবেদকও বেশ কয়েকবার ঘুরে তাদের স্টাফকে পান এবং তারা একই কথা বলেন।

সাইফুল ইসলামের “কাশ্মীর ট্রাভেলস” সরকারের অনুমতিবিহীন একটি প্রতিষ্ঠান। সাইফুল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উচ্চ পদস্থদের নাম ব্যাবহার করে নিজেকে অনেক ক্ষমতাশালী হিসেবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছেন।

আমাদের প্রতিবেদক ব্রাম্মনবাড়িয়ায় সাইফুলের বাবা ইমরান সাহেবের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। দিনি বলেন তারা জানেন তার ছেলে দুবাইতে। প্রতারণার বিষয়ে তারা কিছু জানতেন না। এবং প্রতারণা ও কাতারে ভুক্তভূগিদের কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন এরকম হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যাবস্থা নেয়া উচিত। তিনি সাইফুলের সাথে কথা বলে ২ দিনের মধ্যে জানাবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তার আর কোন ফোন আসেনি।

এদিকে খুঁজে পাওয়া যায় প্রতারণার অভিযোগের মূল ব্যাক্তি সাইফুলের ইমো নাম্বার। প্রতিবেদক তার সাথে কথা বলেন। কাতারে সেই দুজনকে আটকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিভিন্ন ভাবে প্রতিবেদক ও সাংবাদিকতার নানা আইন বোঝাতে থাকেন। তিনি এও বলেন আমারো অনেক উচ্চ পদস্থ সাংবাদিক ও প্রশাসন আছে। প্রতিবেদক যখ বলেন যে আমরা তদন্ত রিপোর্টে র স্বার্থে আপনার বক্তব্য নিচ্ছি, আপনার ক্ষমতা জানতে চাইনি, এটা শোনার পর তিনি বলেন এটার সমাধান হয়ে গেছে। প্রতিবেদক জানান আমাদের তথ্য মতে এখনো সমাধান হয়নি। তখন তিনি কাতারের একজন এজেন্টের কথা বলেন যে তিনি টাকার জন্য এসব করছেন। কিন্তু যারা তার এজেন্সীর মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে অত্যাচারিত তাদের দায়িত্ব তো আপনার উপর বর্তায়, এ প্রশ্নটি সাইফুল এড়িয়ে যান এবং বিভিন্ন কথা বলে প্রতিবেদকের নাম্বার নেন এবং খোজঁ নিয়ে ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানান। তিনি এও জানান তিনি এখন রাশিয়াতে আছেন, অথচ তার বাবা বলেছেন দুবাইতে, সাইফু এপ্রশ্নের উত্তরে বলেন তার বাবা জানেন না।

WhatsApp Image 2024 04 26 at 11.39.47 58c86d52

এদিকে জানা যায় গত কয়েকদিন আগে সাইফুল যার নাম বিভিন্ন জায়গায় ব্যাবহার করেছেন তাকে ও তার সহযোগীদের নিয়ে ভুক্তভোগীদের একজন প্রতিনিধির সাথে বসেন এবং সেখানেও সমাধান হবে বললেও কোন সমাধান হয়নি।

ভুক্তভোগীরা হোলেন -নজরুল, কালাচান, আমিরুল, জাহাঙ্গীর আল আমিন, হেলাল উদ্দিন, হাসিবুল ইসলাম, মোঃ রুপন আলী, মাসুম, নাজমুল, রতন, কামরুল সহ আরো অনেকে।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে সাইফুলের নানা রমরমা কথা শোনা যায়। বিপুল পরিমাণ টাকা হাতে পেয়ে অহংকারে তার পা মাটিতে পড়তো না। কাউকে বলতো প্রশাসন তার পকেটে। আবার সাংবাদিকরাওতার পকেটে বলে গল্প করে বেড়াতেন। আর এভাবে তার প্রতারণার জালে অনেককে আটকে ফেলেছেন। তারই এক ঘনিষ্ট নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সে বিদেশে বসে ভেনিজুয়েলার পাসপোর্ট করার জন্য দৌড়াচ্ছেন। রক্ত পানি করা কৃষক সহ নানা শ্রমজীবির টাকা নিয়ে সে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং আবারো নাকি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছেন।

সাইফুলের প্রতারণার জন্য থানায় মামলা সহ ডিবির হেড কোয়ার্টারে তার অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। এবং খুব শীঘ্রই কাতার দূতাবাসে ভুক্তভোগীদের বিস্তারীত দিয়ে তাদের উদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া সাইফুলকে ধরনে রাশিয়া, উজবেকিস্তান, দুবাই, কাতার সহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও মন্ত্রনালয়ে ১৫-২০টি পত্রিকার নিউজের কাটিং, প্রতারণার প্রমাণ ও সাইফুলের ছবি ও পাসপোর্ট এর ছবি পাঠানো হবে।

–নিজস্ব সংবাদদাতা