Select Page

বদলি নয়, শিক্ষক মুরাদের স্থায়ী বরখাস্ত চায় ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা

বদলি নয়, শিক্ষক মুরাদের স্থায়ী বরখাস্ত চায় ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা

তদন্তে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সত্যতা মেলায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখা থেকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সদ্য বদলি আদেশ পাওয়া শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের স্থায়ী বরখাস্ত চায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

এই দাবিতে রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) আজিমপুরে ভিকারুননিসার প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তারা। বিক্ষোভে প্রতিষ্ঠানটির অনেক সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরাও যোগ দেন।

এসময় ‘মুরাদ হোসেন সরকার, জেলে ভরা দরকার’ , ‘বাবার মুখোশে পিশাচ, নিপাত যাক’, ‘যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষকের বহিষ্কার চাই’ বলে নানা স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।

‘ভিকারুননিসায় আরেক পরিমল’ শিরোনামে শুক্রবার প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। মুরাদ হোসেনকে অপসারণের পাশাপাশি আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্তে শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা উঠে আসে গতকাল। এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই শিক্ষককে প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

এ সংশ্লিষ্ট আদেশে বলা হয়, ‘আপনি মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখায় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এবং এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষ্যে আপনাকে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।’

শিক্ষক মুরাদের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে আসার মানে কী? যদি শিক্ষাগ্রহণের বদলে নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী নিশাত বলেন, ‘কোচিং শেষে দুয়েকজনকে আটকে রেখে উনি নিপীড়ন করতেন। গার্লস স্কুল হওয়া স্বত্বেও এ শিক্ষকের কাছে ভিক্টিমরা অহরহ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আমাদেরও সিনিয়ররা যারা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে গেছেন তারাও বলছেন, ১০-১১ বছর ধরে কেউ কখনও মুখো খোলেনি যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।’

মুরাদ হোসেনকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্তি করা নিয়ে অভিভাবক শাহনাজ বলেন, ‘তাকে বরখাস্ত না করে কেন অধ্যক্ষের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে তা বোধগম্য নয়। আমাদের বাচ্চারা এমন শিক্ষকের কাছে নিরাপদ নয়। তার স্থায়ী বরখাস্ত চাই, করতে হবে।’

প্রাক্তন শিক্ষার্থী সামিহা আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘আমাদের দাবি মুরাদ হোসেনকে সম্পূর্ণভাবে বরখাস্ত করা। অথচ তাকে প্রধান শাখায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই শিক্ষক যেন কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে ফেরত আসতে না পারে।’

তিনি অভিযোগ করেন, মুরাদের শাস্তি চাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে হুমকি ধামকিও দেওয়া হচ্ছে।

এসময় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার দিবা প্রধান শাবনাজ সোনিয়া কামাল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা ব্যবস্থা নেব। আমাদের ওপর আস্থা রাখো।’

পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, তার ওপর আস্থা রাখতে। তিনি তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায়ের বিচার করতে ছাড় দেবেন না। তবে সেটি একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় করার জন্য সময় চেয়ে নেন।

এসময় সোমবার রাতের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও সাড়া দেননি শিক্ষার্থীরা।

সূত্রঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ

About The Author

অনিন্দ্য

Aninda, Sub-Editor