ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের খন্ড-বিখন্ড লাশ ভারতের কলকাতা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (২২ মে) নগরীর নিউটাউন থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে।কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া একজন ক্যাবচালক জানিয়েছে, এক সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করা হয়েছে এবং লাশ খণ্ডবিখণ্ড করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনে বলা হয়েছে, ‘ভারতে চিকিৎসা করাতে এসে খুন হন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। গত আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর নিউটাউন থেকে উদ্ধার হলো বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লিগের তিনবারের সংসদ সদস্যের লাশ। এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে দুই দেশের কূটনৈতিক মহলে। কে বা কারা তাকে খুন করল তার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।’

এতে আরো বলা হয়েছে, চিকিৎসা করাতে গত ১২ মে কলকাতা এসেছিলেন ওই সংসদ সদস্য। তার পর পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি তিনি। ১৪ মে থেকে তার ফোনও ‘সুইচ অফ’ ছিল। তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে আনোয়ারুলের পরিবার এর পর যোগাযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর যোগাযোগ করে দিল্লি ও কলকাতায় বাংলাদেশের দূতাবাসের সাথে। ওই সংসদ সদস্যের খোঁজে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কলকাতা পুলিশ। এরই মাঝে বুধবার নিউটাউনের বিলাসবহুল আবাসন থেকে উদ্ধার হয় তার লাশ।’

জানা গেছে, ‘কলকাতায় এসে তিনি উঠেছিলেন দীর্ঘদিনের পরিচিত বরানগরে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। দুই দিন সেখানে থাকার পর ১৪ তারিখ তিনি গোপালকে জানান, বিশেষ প্রয়োজনে তিনি বের হচ্ছেন, আজই ফিরে আসবেন। তবে তার পরদিনও তিনি ফেরায় উদ্বিগ্ন গোপাল থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও তাকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন সুইচ অফ পাওয়া যায়। এর পরই সংসদ সদস্যের খোঁজে তৎপর হয়ে ওঠে ভারত ও বাংলাদেশ। এরই মাঝে তার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।’

পাশাপাশি আরো একটি তথ্য বলছে, ‘কলকাতায় এসে নিউটাউনের একটি বিলাসবহুল আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তিনি। সেখানে তার সাথে ছিলেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু কে বা কারা খুন করল, কেনই বা খুন করল এখনো পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে ফ্ল্যাটে লাশ পাওয়া গেছে সেটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সেখানে কাউকে এখনো ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটে তিনজনকে ঢুকতে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এদের মধ্যে একজন নারী। তবে ওই তিনজনকে সেখান থেকে বের হতে আর দেখা যায়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, আনোয়ারুল আজিমের লাশ উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কলকাতা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন সকালে কলকাতায় ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বলে নিশ্চিত করেছে কলকাতায় বাংলাদেশের হাইকমিশন।

এর আগে ২০ মে আজিমের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করেছিল।

তারা জানতে পেরেছে কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনো জায়গায়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ, এমনটাই জানিয়েছিলেন উপ-দূতাবাসের এক কর্মকর্তা, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি।

কলকাতার উত্তর শহরতলি বরাহনগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আজিম, সেই গোপাল বিশ্বাস বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে- ১৩ মে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে ভাড়া করা গাড়িতে উঠেছিলেন আজিম, সেটির চালকের সন্ধান পেয়েছে বলেই স্থানীয় পুলিশের তরফে তাকে জানানো হয়েছে।

‘পুলিশের কাছে আমি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলাম। তারা ওই গাড়িটিকে খুঁজে বের করেছে আর চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই চালক নাকি পুলিশকে জানিয়েছেন যে- সংসদ সদস্যের সাথে একজন বাংলাদেশী নাগরিক ছিলেন। এদের দু’জনকে তিনি কলকাতা সংলগ্ন নিউ টাউন এলাকায় ছেড়ে দেন ১৩ মে,’ জানাচ্ছিলেন বিশ্বাস।

এর বাইরে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

২০ মে উপ-দূতাবাস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস সচিব রঞ্জন সেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সংসদ সদস্যের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের শনিবার জানানো হয়। তারপরই আমরা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করি। তারা খোঁজখবর করছেন এমনটাই আমাদের জানানো হয়েছে।’

আবার শেষবার যেহেতু নিখোঁজ সংসদ সদস্যকে কলকাতায় দেখা গিয়েছিল, তাই কলকাতা পুলিশের সাথেও অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ রাখছিল বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস।

সূত্রঃ নয়া দিগন্ত