চল্লিশোর্ধ বয়সী এমন অনেক নারী আছেন যাদের দিকে তাকালে এখনও চোখ সড়ানো দায়, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে এখনও এতো সুন্দর! সতেজ-তারুণ্যদীপ্ত চেহারা পাওয়ার আকাঙক্ষা কার না আছে? কিন্তু সবার এই আকাঙক্ষা কি পূরণ হয়?
নারী পুরুষ সকলেই নিজের সৌন্দর্য্য ও স্মার্টনেস ধরে রাখতে চায়। বিশেষ করে নারীরা এ বিষয়ে বেশী আগ্রহী। মাঝ বয়সী নারীরা বয়স লুকানোর চেষ্টা করেন বেশী। চাইলেই কী হবে? বয়স বাড়ে আপন গতিতে। সময়ের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে তরুণ দেখানোর জন্য কত ধরনের চেষ্টা না মানুষ করে চলছেন যুগ যুগ ধরে।
নীচের টিপস গুলো যদি নিয়ম মতো পালন করা যায় তাহলে আপনার ত্বকের তারুণ্য যেমন ধরে রাখতে পারবেন তেমনি ত্বকের লাবণ্যও বাড়বে।
১. প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর খালি পেটে এক গ্লাস উষ্ণ পানি খাবেন।সম্ভব হলে সামান্য মধু মিশিয়ে নিন।এক গ্লাস উষ্ণ পানি শুধুমাত্র ত্বকে নয়,আপনার বাকি দেহকেও সতেজ করে তুলবে।তাছাড়া এটি আপনার শরীরের বাড়তি চর্বি কাটতে সাহায্য করে।
২. বাইরে বেরোনোর সময় স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন।চাইলে রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা,সানগ্লাস ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে পারেন।কড়া রোদে বেরোনোর সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন,এতে ত্বক সূর্যের কড়া রশ্মির প্রকোপ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পায়।
৩. মুখে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।একটি হাঁড়িতে গরম পানি নিয়ে সেই বাষ্প মুখে লাগান।৩/৫ মিনিট হাল্কা করে ভাপ নিয়ে পরিষ্কার তুলো দিয়ে মুখ মুছে নিন।
৪. বাসায় ফেরার পর ভালোভাবে যত্ন করে মেকআপ তুলুন। চাইলে অলিভ ওয়েল/আমন্ড ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন।আঙুলের ডগায় তেল নিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করুন,বেশী ঘষাঘষি ত্বকের ক্ষতি করবে।তারপর ফেসিয়াল টিস্যু অথবা তুলা দিয়ে মেকআপ তুলুন।যদিও গরমে কড়া মেকআপ ব্যবহার না করলেই ভাল।
৫. বেশী বেশী মৌসুমি ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন।খাদ্যতালিকায় শাক সবজি নিয়মিত রাখুন।তেল মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৬. সারাদিনে পরিমাণ মতো পানি পান করুন। তাছাড়াও ঘরোয়া পদ্ধতিতে কয়েকটি প্যাক বানিয়ে ব্যাবহার করলেও বেশ উপকার পেতে পারেন।
এছাড়াও যারা মন থেকেই তারুণ্য ধরে রাখতে চান তাদের জন্য কিছু পরামর্শ: এ প্রসঙ্গে ডায়েটিশিয়ান সেলিনা বদরুদ্দিন বলেন, তারুণ্য ধরে রাখাতে আপনার খাবার তালিকায় নিচের খাবারগুলো যোগ করুন।
১. মাছ, ওমেগা-৩ ফ্যাট আর আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি করে মাছ খায় তারা দীর্ঘ জীবন পান। এছাড়া তাদের হার্ট অ্যার্টাকের ঝুঁকি কম থাকে।
২. জলপাই তেলে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল যা বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। জলপাই তেল হার্ট অ্যার্টাকের ঝুঁকিও কমায়। এছাড়া জলপাই তেলে থাকা ভিটামিন এ ও ভিটামিন ‘ই’ ত্বকের কুঁচকে যাওয়া রোধ করে।
৩. দইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। এছাড়া দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া হজমের জন্য ভালো। ব্যাকটেরিয়া বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। দইয়ের গুণের কথা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ত্বকে দই মাখালে ব্রণের উপদ্রুব থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিয়মিত দই মাখলে ত্বক কোমল থাকে, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া ভাব, রোদে পোড়া ভাব ও শুষ্ক ভাব দূর হয়। এছাড়া দইয়ে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা ত্বকের মরা চামড়া দূর করে।
৪. কোকো দিয়ে তৈরি ডার্ক চকলেটে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ডার্ক চকলেট আছে ক্যাটেচিন, এটেচিন ও প্রোসাইনিডিনের মতো পলিফেনল। এসব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত প্রবাহ সচল রাখে।
৫. বাদামে আছে অসম্পৃক্ত চর্বি, প্রচুর ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়া, বাদামে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. বয়স ধরে রাখার একটি সেরা অস্ত্র হলো টমেটো। টমেটোতে আছে লাইকোপেন যা হার্ট অ্যার্টাকের ঝুঁকি কমায়। লাইকোপেন কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ও ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। লাইকোপেন প্রাকৃতিক সানব্লক হিসেবে কাজ করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ত্বকের শুষ্ক ও কুঁচকানো ভাব দূর করে ত্বককে রাখে সতেজ।
৭. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, বেশী পরিমান পানি পান তারুন্য ধরে রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। নিজের প্রতি আস্তা রাখুন, সব সময় পজেটিভ ধারণা পোষণ করুন।
আপনার সকল চাওয়া পাওয়ার জন্য স্রষ্টার সাহায্য প্রার্থনা করুন। জীবনের সব ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি মেনে চললে আপনার সুখ সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য আপনার নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত
Aninda, Sub-Editor