চাঁদ রাতে ৪ ঘণ্টার সংঘর্ষে শ্রীমঙ্গল রণক্ষেত্র, সাবেক মেয়রসহ আটক ১৪
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চাঁদ রাতে ৪ ঘণ্টার সংঘর্ষে শ্রীমঙ্গল আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনায় ঈদের জমজমাট বাজার মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায়।
পুলিশ ৫৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর রাত ৩টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার গদারবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধুর কয়েকটি বাসায় যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু, তার ছেলে মুরাদ হোসেন সুমন, আলকাছ কাউন্সিলর ও মেয়রের চাচাত ভাই পৌর বিএনপির সদস্য সেলিম মিয়া, ইসমাইল হোসেন, ইউছুফ মিয়া, রায়হান রনি, লিয়াকত আলী, আইনুল ইসলাম, মো. বদরুজ্জামান, মো. মিজান, সোহেল মিয়া, হৃদয় মিয়া। আটক বাকিদের নাম যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার গদারবাজার এলাকার খাস জমিতে জেলা বিএনপি নেতা, সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু ও কয়েকজন ফল ব্যবসায়ী বিনা লাভের দোকানের নামে দখলের চেষ্টা করেন। অন্যদিকে টমটম (ইজিবাইক) চালকরা সেখানে তাদের স্ট্যান্ড বসাতে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করান। চাঁদ রাত সাড়ে ১১টার দিকে একজন চালক বিনা লাভের দোকানের পাশে একটি ইজিবাইক রাখেন। এ সময় দোকানের সেলসম্যান তাকে বাধা দেন। তখন দুইজনের মাঝে তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সময় শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের আনহার মেম্বার বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সাবেক মেয়রসহ ৪০-৫০ জন যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ উপস্থিত হলে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে টমটম শ্রমিকদের পক্ষে পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকা থেকে কয়েকশ লোক যোগ দিলে উভয় পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ফলে শ্রীমঙ্গল শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা রাত তিনটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
স্থানীয়রা জানান, সংঘর্ষ চলাকালে মেয়র পক্ষ স্টেশন রোডে ও টমটম শ্রমিকরা শহরের চৌমোহনা এলাকায় অবস্থান করছিল। শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ৫৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ দিকে মৌলভীবাজার জেলার পাইকারী ও সস্তা দরে কেনা-বেচার জন্য শ্রীমঙ্গলের বিপণী বিতান ও মার্কেটের উপচে পড়া ভিড় মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায়।
আহত ৩৭ জন শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জনকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি আহতরা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম সরকার ১৪ জনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আটকদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রোববার দিবাগত রাতের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ৫৬ রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সূত্রঃ সমকাল