গাজায় রক্ত ঝরছে, ফিফা-উয়েফা চুপ! আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠনের দ্বিচারিতা
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনি। শিশু, নারী ও বয়স্ক— কেউই এই ভয়াবহ সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যেখানে এই কর্মকাণ্ডকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, সেখানে আন্তর্জাতিক ফুটবলের শীর্ষ সংস্থা ফিফা এবং ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে।
রাশিয়ার ক্ষেত্রে কড়া, ইসরাইলের ক্ষেত্রে নীরব
২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের পরপরই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় ফিফা ও উয়েফা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে রাশিয়ার জাতীয় দল ও ক্লাবগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি অলিম্পিকসহ অন্যান্য ক্রীড়াতেও রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
কিন্তু একই ধরনের বা তার চেয়েও ভয়াবহ সহিংসতা চালিয়েও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ইসরাইলি জাতীয় দল ও ক্লাবগুলো এখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নিচ্ছে, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগে তাদের অংশগ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। এই দ্বিমুখী নীতি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ক্রীড়াঙ্গন কি মানবাধিকার বিবেচনা করবে না?
বিশ্বের অনেক ফুটবল সমর্থক, খেলোয়াড় ও সংগঠন ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন— “একটি দেশের সামরিক আগ্রাসনকে যদি ক্রীড়াক্ষেত্রে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ধরা হয়, তবে ইসরাইলের গণহত্যা কি সেই মানদণ্ডে পড়ে না?”
মানবাধিকারের প্রশ্নে ‘কঠিন চুপ’
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় কয়েক মাসের মধ্যে দশ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, যাদের একটি বিশাল অংশই শিশু। হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির— কোথাওই রেহাই নেই। অথচ এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে ফিফা বা উয়েফার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি পর্যন্ত আসেনি।
আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে
প্যালেস্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ইতোমধ্যেই ফিফার কাছে দাবি জানিয়েছে ইসরাইলি ফুটবল ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ করার জন্য। তাদের অভিযোগ— ইসরাইল ক্রীড়াকে ব্যবহার করছে তাদের আগ্রাসনের অস্ত্র হিসেবে। অনেক ফুটবল বিশ্লেষক বলছেন, যদি এই চাপ ফিফা ও উয়েফার ওপর না বাড়ানো হয়, তবে ভবিষ্যতে তারা ক্রীড়াক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নিতে আরও বেশি স্বাধীনতা পাবে।
ফিফা ও উয়েফা নিজেদের ‘রাজনীতি থেকে মুক্ত’ সংস্থা হিসেবে দাবি করলেও বাস্তবে তাদের সিদ্ধান্তে স্পষ্ট রাজনৈতিক পক্ষপাত দেখা যাচ্ছে। মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও ক্রীড়ার নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য এখনই তাদের জোরালো ভূমিকা রাখা জরুরি। নাহলে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আর ধরে রাখা কঠিন হবে।
–স্পোর্টস ডেস্ক