Home ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ মেসির ম্যাজিকে আর্জেন্টিনার জয়

মেসির ম্যাজিকে আর্জেন্টিনার জয়

0
ছবিঃসংগৃহীত
ম্যাচের ৬৪ মিনিটে এলো সেই ম্যাজিক মোমেন্ট! ম্যাজিশিয়ান মেসি গোল করলেন। এবং সেই গোলেই জেগে উঠলো মৃতপ্রায় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন। ট্র্যাকে ফিরলো তারা। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ সময়ে এনজো ফার্নান্দেজের বোনাস গোলে আর্জেন্টিনার দাপুটে জয়টা নিশ্চিত হলো। ২-০ গোলের এই জয়ে আর্জেন্টিনা এখন দুঃস্বপ্নে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে সুখস্বপ্ন দেখছে।

দুই ম্যাচে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট এখন তিন। সমান ম্যাচে সৌদি আরবেরই তাই। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে পোল্যান্ড পয়েন্টের শীর্ষে। এক ড্র ও এক হার নিয়ে মেক্সিকোর সঞ্চয় মাত্র এক পয়েন্ট। ‘সি’ গ্রুপের পয়েন্টের সর্বনিম্ন এখন মেক্সিকো। এই গ্রুপের পয়েন্টের যে সমীকরণ তাতে এখনো কোন দু’দল দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে তা নিশ্চিত নয়। গ্রুপের শেষ ম্যাচে মিলবে তার সমাধান।

এই ম্যাচে ম্যাচউইনার হিসেবে মেসিকে আর্জেন্টিনার ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। মেসি সেই দাবি মেটালেন। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনা তিনটি গোল করেছে। দুটিই এসেছে মেসির পা থেকে। বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে ২১ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ৮। ডিয়োগো আরমান্দো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ পরিসংখ্যানও ঠিক তাই। গোল উৎসব করে একবার আকাশের দিকে তাকালেন মেসি। দু’বছর ধরে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার খেলা দেখছেন আকাশের ঠিকানা থেকে। আর্জেন্টিনার এই জয়ে নিশ্চয়ই স্বর্গে পার্টিতে মজেছেন ম্যারাডোনা।

গোলশূন্যভাবে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য ঝাঁপালো আর্জেন্টিনা। ৬৪ মিনিটের সময় জাদু দেখালো মেসির বাম পা। ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে বাম পায়ে মেসি গড়ানো শট নিলেন। যাকে বলে মাটি কামড়ানো শট। মেক্সিকোর গোলকিপার বল ধরতে ঝাঁপালেন বাম দিকে। কিন্তু বলের নাগাল পেলেন না। দূর পোস্টের জালে বল জড়াতেই আনন্দে ফেটে পড়লো গোটা লুসেইল স্টেডিয়াম। গোল করেই মেসি ছুটলেন দর্শক গ্যালারিতে। ফ্লাইং কিস দিলেন। দু’হাত তুলে আর্জেন্টাইন দর্শকদের জানালেন- আমি পেরেছি, আমরা পেরেছি, সঙ্গে থাকো তোমরা।

মেসির ম্যাজিকে আর্জেন্টিনার জয়
ছবিঃ সংগৃহীত

এর আগে গোলশূন্যভাবে দ্বিতীয়ার্ধ শেষ হতেই ফেসবুকে এক আর্জেন্টাইন সমর্থকের দুঃখভরা স্ট্যাটাস, ‘এই খেলায় কাপ তো দূরের কথা, পিরিচও আইবো না!’ শুরুর ৪৫ মিনিট যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে নেমেছিলো মেক্সিকো তার পুরোটাই করে দেখালো তারা। দু’দলের খেলার যথোপযুক্ত শিরোনাম একটাই, ‘মেক্সিকো খেললো আর আর্জেন্টিনা শুধু দৌড়াদৌড়ি করলো!’

কিকঅফের সঙ্গে সঙ্গে মেক্সিকো বল পায়ে আগ্রাসী মনোভাব দেখালো। প্রথম ৪৫মিনিট পর্যন্ত সেটা তারা ধরেও রাখলো। মেসিকে মাঝখানে রেখে প্লেমেকারের ভূমিকায় খেলালেন আর্জেন্টাইন কোচ। কিন্তু এই অর্ধে মেসি শুরুর ২০ মিনিটে বলার মতো কোন মুভই করতে পারলেন না! আর্জেন্টিনা গোলের জন্য মরিয়া হবে- এটা জেনেই বেশিরভাগ সময় খেলা মাঝমাঠে রাখার চেষ্টায় থাকলো মেক্সিকো। শুরুর অর্ধে এই কৌশলে তারা সফলও হলো।

সুযোগ বুঝে মেক্সিকো আক্রমণে গেলো। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে ফিনিসিং দেওয়ার মতো খেলোয়াড়ের যে বড্ড অভাব মেক্সিকোর এই দলে। পুরো মাঠ জুড়ে প্রথমার্ধে পরিশ্রমী ফুটবল খেললেন অ্যালেক্সিস ভেগা।

ম্যাচ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে শুরুর ২০ মিনিটে আক্রমণে আর্জেন্টিনার চেয়ে মেক্সিকোই বেশি এগিয়ে ছিল। গোল করার মতো ক্লিয়ার সুযোগ তৈরি করে শুরুতে মেক্সিকোই। ম্যাচের ১১ মিনিটের সময় ভেগার ফ্রিকিক আর্জেন্টিনার বক্সে গিয়ে পড়ে। বল ধরার জন্য হেরেরা গতি বাড়ান। কিন্তু তাল মেলাতে পারেননি। বলের সঙ্গে সংযোগ হলে নিশ্চিত বিপদ হতো আর্জেন্টিনার।

সবমিলিয়ে শুরুর অর্ধে পোস্টে শট গেলো মোটে একটি। ফাউল হলো ১৫টি। শুরুর ৪৫ মিনিটে লুসেইল স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে হল্লা উঠলো সারাক্ষণ, কিন্তু মাঠে দু’দল যে ফুটবল খেললো তাতে যে গল্পের কোন উপাদানই নেই!

এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার গল্পের শুরু হলো দ্বিতীয়ার্ধে মেসির ম্যাজিক গোলে। এবং ফার্নান্দেজের বাঁকানো কিকের দুর্দান্ত গোলে সেই গল্পের রং আরও রঙিন হলো। খেলা শেষ হতেই মাঝরাতে মহল্লায় শ্লোগান উঠলো- আর্জেন্টিনা আছে।

এই ম্যাচ জিতেই তো আর্জেন্টিনা জানালো তারা এখনো বিশ্বকাপে আছে।

Exit mobile version