দেশ ছেড়েছেন দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত সাংসদ হাজি সেলিম। আওয়ামী লীগ দলীয় এই এমপির ঈদের পরেই বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের কথা ছিল।
গত ৩০ এপ্রিল বিকেলে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক যান সাংসদ হাজি সেলিম। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সোমবার (২ মে) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে।
ওই সূত্র বলছে, শনিবার তিনটি গাড়ি নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে যান হাজি সেলিম। সেখানে কবর জিয়ারত করে বিমানবন্দরে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে পরিবারের কেউ ছিলেন না। তার সফরসঙ্গী হিসেবে ঘনিষ্ঠ কেউ যাননি। তিনি (হাজি সেলিম) যাওয়ার আগে বা পরে ঘনিষ্ঠ কেউ ব্যাংকক গিয়ে থাকতে পারেন। চিকিৎসার কথা বলে তিনি ব্যাংকক গেছেন।
এ বিষয়ে হাজি সেলিমের বড় ছেলে সোলাইমান সেলিমের এখনও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি গতকাল রবিবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাঁর বাবা এখন দেশে নেই। এ বিষয়ে জানতে হাজি সেলিমের ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন বেলালের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, এই রায় বহাল থাকার পর হাজি সেলিম আর সাংসদ থাকতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী ওরফে মানিক বলেছেন, উচ্চ আদালতে দণ্ডিত আসামি দেশ ত্যাগ করতে পারেন না। যাঁরা তাঁকে দেশ ত্যাগ করতে সাহায্য করেছেন, তাঁরা উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন। আইনের চোখে অপরাধ করেছেন।
অন্যদিকে হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ বলেছেন, উচ্চ আদালত তাঁকে এক মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময়ের আগে তাঁর বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই।
উচ্চ আদালতে দণ্ড বহাল থাকা এবং নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ সত্ত্বেও যদি হাজি সেলিম বিদেশে যেতে পারেন, তাহলে সেই নিয়ম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে একই হলো না কেন?
বিএনপির নেতারা যতবার চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন, ততবার আওয়ামী লীগের নেতারা, মন্ত্রীরা বলেছেন, দণ্ডিত আসামির দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে হাজি সেলিমের জন্য সেই সুযোগ কীভাবে হলো? হাজি সেলিমের আইনজীবীর ভাষ্যমতে, তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণেই বিদেশে গিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ যে সুবিধা পেতে পারেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী সেই সুবিধা পেতে পারেন না? এখানে খালেদার জন্য এক আইন আর হাজি সেলিমের জন্য অন্য আইন দেখা যাচ্ছে।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজি সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল রেখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজি সেলিমকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই সময়সীমার মধ্যেই আওয়ামী লীগের এই সাংসদ দেশ ছেড়েছেন।
দুর্নীতির মামলায় এক যুগ আগে বিচারিক আদালতের রায়ে সাংসদ হাজি সেলিমের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাজি সেলিম হাইকোর্টে আপিল করেন।
এই আপিলের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো, ভোরের কাগজ











