ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। শিগগিরই না দিলে তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন তারা।

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে রয়েছেন নওগাঁর এ এস এম সাইদুজ্জামান সাঈদ। স্বজনদের কাছে তিনি জানান, মুক্তিপণ দেওয়া না হলে একে একে মেরে ফেলা হবে সবাইকে।

সাইদুজ্জামান সাঈদ নওগাঁ শহরের আরজী নওগাঁ শাহী মসজিদ ফিসারি গেট এলাকার আব্দুল কায়েমের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে সাইদুজ্জামান সাঈদের পরিবার জানতে পারেন ছেলে যে জাহাজে রয়েছে সেই জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। পরে জাহাজটি জলদস্যুরা আটক করে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এমন খবর শোনার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। ছেলেকে ফেরত পেতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

বুধবার (১৩ মার্চ) বিকালে শহরের বাড়িতে গিয়ে সাইদুজ্জামান সাঈদের বাবা-মাকে ছেলের জন্য আর্তনাদ করতে দেখা যায়।

এ সময় বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আব্দুল কায়েমের বলেন, গতকাল বিকাল ৩টার দিকে জানতে পারি ছেলে যে জাহাজে রয়েছে সে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। তবে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তারা দিচ্ছে।

এরপর রাত ১০টায় আমার ছেলের বউয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ছেলের। তখন ঘরে বন্দী করে রাখার কথা জানান। জাহাজটি তাদের জিম্মায় নিয়েছে, তাদেরকে কিছু করতে দিচ্ছে না বলে জানান।

মা কোহিনুর বেগম বলেন, এখন আল্লাহর ওপর ভরসা রাখছি আমরা। আল্লাহ যেন সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ জাহাজের সবাইকে সবার মায়ের বুকে ভালো ভাবে ফিরিয়ে দেয়। এছাড়াও আমরা প্রধানমন্ত্রী ও কোম্পানির কাছে অনুরোধ জানাবো তারা যেন খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়। মা হিসেবে এটাই আশা। এসময় দেশবাসী সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান তিনি।

সাইদুজ্জামান সাঈদের স্ত্রী মান্না তাহরিন বলেন, সর্বশেষ গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি তাকে জানান তারা সবাই ভালো আছেন। ইফতার করছেন এবং সবাইকে এক রুমে রাখা হয়েছে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় দিকে জাহাজের আরেকজন আমাকে ভয়েস মেসেজ দিয়ে রেখে দেন সবাই ভালো আছেন। সেহরি খেয়ে সবাই এক রুমেই ঘুমাচ্ছেন। তবে মুক্তিপণ যত তাড়াতাড়ি দেওয়া হবে ততো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে। মুক্তিপণ দেওয়া না হলে একে একে মেরে ফেলা হবে। এটা শোনার পর আরো বেশি আমরা চিন্তায় আছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এক বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। বাচ্চাটা অনেক ছোট এখনো বুঝতে শিখেনি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে একটাই আবেদন আমার স্বামীসহ জাহাজের সবাইকে সুষ্ঠুভাবে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন ২৩টি জাহাজের একটি এমভি আবদুল্লাহ। এর পণ্য পরিবহন ক্ষমতা ৫৮ হাজার টন। জাহাজটি কবির গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেডের। পণ্যবাহী জাহাজটি কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল দুবাই।

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।

জিম্মি ২৩ নাবিকের হলেন জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনি ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিসিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্ম শ্মসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

জিম্মির পর তাদের একটি কেবিনে রাখা হয়েছিল। এরপর নাবিকরা নিজেদের মোবাইল থেকে কয়েকটি ভিডিও বার্তা পাঠালেও সেগুলো জলদস্যুরা জব্দ করে নেওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জাহাজটিতে ২০-২৫ দিনের খাবার রয়েছে। ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি রয়েছে বলে জানা গেছে।

জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম আজ গণমাধ্যমকে বলেন, এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাও আছে। আশা করছি, নাবিক ও জাহাজটি ফিরিয়ে আনতে পারব। প্রয়োজনে মধ্যস্থতা সংস্থা ও ব্রিটিশ বীমা কোম্পানির সহায়তা নেওয়া হবে।

তথ্যসূত্রঃ ইত্তেফাক