অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। ইতিমধ্যে সে রহস্য উদঘাটন করতে অভিনেত্রীর প্রেমিক জিয়াউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, র্যাবের ঘেরাটোপে রয়েছে মেকাপ আর্টিস্ট মিহিরও।
এই মিহির শুধু অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুই নয় ২০১৮ সালের মে মাসে বিনোদন জগতের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তাজিন আহমেদের মৃত্যুর সময়ও পাশে ছিলেন। এমনকি দুজনকে হাসপাতালে নেয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসকের মৃত ঘোষণা পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন মিহির। এককথায় তাদের পুরো মৃত্যুর ঘটনাটি দেখেছেন একজন মেকআপম্যান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর আগে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ একা থাকতেন। একই অবস্থা ছিল অভিনেত্রী হিমুর ক্ষেত্রেও, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন এ অভিনেত্রী। মৃত্যুর সময় স্বজন-পরিজন কেউই পাশে ছিল না তাজিনের। একই দৃশ্য দেখা যায় অভিনেত্রী হিমুর ক্ষেত্রেও। তবে শেষ সময়ে দুজনেরই পাশে ছিলেন মিহির।
হিমুর মৃত্যুর পর মিহির প্রসঙ্গে উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, মেকআপ আর্টিস্ট মিহির এক সময় অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর ব্যক্তিগত মেকআপ আর্টিস্ট ছিল। আমরা তখন নিয়মিত কাজ করতাম। শ্রাবন্তী তখন প্রথম সারির নায়িকা। শ্রাবন্তী যখন মিহিরকে নিতো তখন মিহিরের অনেক দাপট ছিল। শ্রাবন্তীর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিহিরেরও অবস্থান পরিবর্তন হয়। তারপর মিহিরকে তাজিন আপার সঙ্গে পাই। তাজিনের মৃত্যুর ঘটনার সময়ও মিহির ছিল। একইভাবে হুমায়ারা হিমুর মৃত্যুর ঘটনায়ও মিহির ছিল।
তিনি আরও বলেন, হিমুর সমস্ত তথ্য, জীবনের যাপনের কষ্ট, সব কিছু মিহির জানে। মিহিরকে ডিবি বা পুলিশের ইন্টারোগেশনে আসা উচিত। তাকে জিজ্ঞাসা করলেই তথ্য পাওয়া যাবে এটা কি অপমৃত্যু, না অন্য কিছু।
সংবাদ মাধ্যম অনুযায়ী, অবশেষে এসব আলোচনা সমালোচনার মাঝে রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে আলোচিত মিহির নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন। সেখানে তিনি হুমায়রা হিমুর মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন। সঙ্গে রাখেন বেশ কয়েকটি প্রশ্নও। ১৫ মিনিটের সেই লাইভের শুরুতেই মিহির জানান, তিনি প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। এজন্য তিনি বিষয়টি সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে লাইভে এসেছেন।
মিহির বলেন, ফেসবুকে আমাকে নিয়ে ঝড় তুলছে কিছু মানুষ। আমি হেন, আমি তেন, আমি ড্রাগ ডিলার। তারপর তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন এরপরও পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নেয় না কেন? তিনি বলেন, আপনারা যে এটা লিখেছেন আপনারা কি জানেন আমি এই তিনদিন কোথায় ছিলাম? আমি হিমুকে বাসা থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি, যখন ডাক্তার ঘোষণা দিয়েছে যে হিমু মৃত সঙ্গে সঙ্গে হিমুর বয়ফ্রেন্ড দুটি মোবাইল নিয়ে পালিয়ে গেছে। তারপর ওর (হিমুর) খালারা আসছে, আমরা থানায় গিয়েছি, স্টেটম্যান্ট দিয়েছি। তখন থেকে আমি কালকে (শনিবার) পর্যন্ত থানায় বসা ছিলাম। শনিবার সকালে ওসি আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পুরান ঢাকা পাঠাইছেন। ওখানে গিয়ে আমি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বাক্ষী দেই। তারপর ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে বলেছেন যে ঠিক আছে আপনি এখন যেতে পারেন। এসআই সাব্বির ভাই বললো আপনার আর কোনো কাজ নেই আপনি যেতে পারেন। এই তিনদিন ধরে আমাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে, নজরবন্দিতে রাখা হয়েছে। আমার ফোন টেপ করা হয়েছে। আমাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে। হাজার হাজার প্রশ্ন করা হয়েছে।
আমাকে পুলিশ আর কি রিমান্ডে নেবে, আমাকে কি নিয়ে ফাঁসি দিয়ে দিবে এমন প্রশ্ন রেখে মিহির বলেন, আমি কি ক্রাইম করছি। আমি হিমুর বাসায় ছিলাম এই কারণে। আমার কাজ বন্ধ, আমি একটা সিরিয়াল করছি ওইটার পেমেন্ট আজকে ছয় মাস ধরে বিটিভিতে আটকানো, বাসা ভাড়া দিতে পারি না। আমার বাড়িওয়ালি আমার রুম তালা মেরে দিসে। তাই আমি বাধ্য হয়ে হিমুর বাসায় ছিলাম। আর এমনিতেও থাকতাম। রাতে হয়ত আমি আমার বাসায় থাকতাম, দিতে আমি হিমুর দেখাশুনা করতে চলে আসতাম। কারণ হিমুর মাকে আমি মা ডাকছি, উনাকে আমি আম্মা বলতাম। হিমুর মা আমাকে বলছে যে আমি না থাকলে আমার মেয়ের দেখাশুনা করিস।
তাজিন আপা মরছে আমি ছিলাম, হিমু মরছে আমি ছিলাম এ বিষয়টি আপনাদের ভাবিয়ে তুলছে জানিয়ে মিহির বলেন, এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে দু’জন মানুষ মরছে আমি ছিলাম। এরা আমার নিকটআত্মীয় ছিল, ফ্যামিলি মেম্বারের মতো। তাজিন আপা আমাকে বলত মুন্নার সঙ্গে আমার যখন বিয়ে হইছে তোর মতন ছেলে হইত আমার। তাজিন আপা আমাকে নিজের ছেলের মতো সম্বোধন করতো। তাজিন আপার বাসায় ছিলাম বলে আমি আপাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি। চিকিৎসা করাইছি। চিকিৎসা করতে গিয়ে উনি তিন-চার ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা পরে মারা গেছেন। আর না হলে তো তাজিন আপা স্ট্রোক করে বাসায় মরে পড়ে থাকত। সাতদিন ধরে দরজা বন্ধ থাকত পরে লাশ বাহির করতে হইত। আপনারা খবর পাইতেন। আমি ছিলাম বলে এরকম কিছু হয়নি। এটা কেউ বলে না যে, তুই ছিলি বলে আমরা তাজিন আপারে ফ্রেশ তরতাজা দাফন করতে পারছি।
তিনি বলেন, আমি না থাকলে হিমুর বয়ফ্রেন্ড তাকে ঘরের ভেতর ঝুলাইয়া রাইখা দরজা বন্ধ কইরা পালাইয়া যাইত। এটা কি হতো না? এটা তো কেউ বলেন না যে, তুই ছিলি বলে হিমুকে আমরা বের করে আনতে পারছি বা ওকে ধরতে পারছে পুলিশ। হিমুর বয়ফ্রেন্ড ইন্ডিয়ান। না হলে তো ওই ছেলে হিমুকে রেখে কবে পালাইয়া যাইত। ঠান্ডা মাথায় পলাইয়া যাইত। আমি ভালো করছি এটা কেউ বলে না। সব খারাপ করছি, আমি রাবন। আমাকে পারলে ফাঁসি নিয়া দেন নিয়া। আপনারা একটা মানুষ আছেন, কেউ আছেন যে আমার পাশে দাড়াবেন। আমার খোঁজ নিয়েছেন। আমি কেমনে আছি, আমার মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি মানুষ না। আমার কষ্ট হচ্ছে না হিমু আমার বোনের মতো মরে গেছে, আমার কি ভেতরে সুখ লাগতেছে, আমার ভালো লাগতেছে। আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলার জন্য সকলে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
মিহির বলেন, হিমু মরছে আমি ছিলাম। এখন আমি করছি না ওই ছেলে করছে সেটা তো ওই ছেলে নিজেই স্বীকার করছে। তারপরও কেন আপনাদের ভেতর এতো দ্বিধাদ্বন্দ্ব যে মিহির ছিল। মিহির ছিল বলেই তো ফ্রেশ হিমুরে বের করে হাসপাতালে নিয়ে আসছে। আমি উপকার করছি এই জন্য আমাকে সকলে মিলে ফাঁসি দিয়ে দেন। আমার কেউ নেই তো, কোনো বড় লেভের মানুষ নেই যে আমাকে সাপোর্ট দিবে, ব্যাকআপ দিবে। আমি মনে করতাম মিডিয়া আমার ফ্যামিলি, আমি কাজ করি, সবাই আমার পরিবার, আমি যখন যেখানে কাজ পাই তাদের জন্য মন থেকে কাজ করি। এমনকি অতিরিক্ত কাজও করে দেই। তাদের যে কাজ আমার করার না এগুলোও আমি করি শুটিংয়ের সেটে। আমি সেটে সবাইকে আপন করার চেষ্টা করি। সবাইকে ভালো করে সার্ভিস দেই। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি এত বছরের সার্ভিসে। আমার ভুলটা কোথায় একজন বের হন, একজন গাইড করেন আমাকে। তা না খালি আমাকে নিয়ে বড় বড় কথা আর বদনামি করবেন, করেন। আমি যদি কোনো ধরণের খারাপ কাজ করতাম তাহলে ভয়ে পালাইয়া যাইতাম। আমার ভেতরে ভয় লাগে না। আমার ভেতরে ঘেন্না লাগছে, ভেতরে কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের জন্য মায়া হচ্ছে যে, আপনারা এতটা নেগেটিভ যে আপনারা মানুষকে নিয়ে ভাবতে পারেন না। মানুষের সাহায্য করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, আমি এই পাঁচ বছরে একটা দিন দেখি নাই হিমুর মা মরছে, হিমু না খাইয়া কান্নাকাটি করতো আমি শুটিং থেকে ছোট ভাইকে ফোন করে বিকাশে টাকা পাঠাইয়া ওর জন্য রুমে খাবার পাঠাইছ। ওর জ্বর অসুখ বিছানা থেকে উঠতে পারে না। কাউকে তো দেখিনি ওকে খাবার দিতে, ওর খেয়াল নিতে, ওর পাশে এসে দাঁড়াইতে। আপনারা কলিগ, ও মরার পর ওরে নিয়া বিভিন্ন মিটিং মিছিল করবেন। কিন্তু জীবিত থাকতে তো ওরে নিয়া এরকম নাচেন নাই কেউ। এখন এগুলো বললে তো আমি খারাপ। আমি অবশ্যই খারাপ, আমাকে নিয়া ফাঁসি দিয়ে দেন।
সূত্রঃ ইত্তেফাক
Aninda, Sub-Editor