সকলই মিশবে ধুলায়–
তবু বেঁচে যাই জীবনে যতটা কুলায়।
প্রেমিক-প্রেমিকা জড়িয়ে দু-হাত,
নেশাতুর কাটে অনন্ত রাত,
পাতায় পাতায় মাখামাখি চাঁদ
পরিচিত পথ ভুলায়…
সকলই মিশবে ধুলায়।
ঢাকা দিয়ে রাখা স্নেহের চাদরে
দেখছি শিশুরা বাড়ছে আদরে,
লাফায়, ঝাঁপায়, হাসে, গান গায়,
রঙিন বেলুন ফুলায়…
সকলই মিশবে ধুলায়।
পরম যত্নে সঞ্চয়ী মন
গুনে গুনে ঘরে তুলে রাখে ধন,
বাবার-দাদার তৈলচিত্র
বৈঠকঘরে ঝুলায়…
সকলই মিশবে ধুলায়।
সম্ভোগে-স্নেহে প্রিয় সংসার,
চালে-ডালে-মাছে-তেলে একাকার,
লক্ষ্মীর যেন প্রদীপ জ্বলছে
রান্নাঘরের চুলায়…
সকলই মিশবে ধুলায়।
স্থাপত্য যত, শিল্পকীর্তি,
পরম্পরায় বোধের ফিরতি,
যে জাদু রয়েছে রবীন্দ্রনাথে–
ভিঞ্চির ছবিগুলায়…
সকলই মিশবে ধুলায়।
এই ঝকঝকে জীবন সত্য,
মৃত্যু সত্য ততটা,
গুনে গুনে সব তুলে নেয় হাতে
দিয়েছিল ভরে যতটা!
সকলই মিশবে ধুলায়–
তবু বেঁচে যাব জীবনে যতটা কুলায়।
(সকাল থেকেই মন বিষণ্ন। প্রিয় দুই লেখক শেখ আবদুল হাকিম এবং বুলবুল চৌধুরী ঘণ্টাকয়েকের ব্যবধানে একই দিনে বিদায় নিলেন।
দুই বন্ধু ছিলেন তাঁরা। মৃত্যু সব ছিনিয়ে নিলেও বন্ধুত্ব ছিনিয়ে নিতে পারে নি। হাতে হাত রেখে একসাথেই তাঁরা যাত্রা করেছেন অন্য ভুবনে।
বুলবুল চৌধুরী সমকাল পত্রিকায় আমার সহকর্মী ছিলেন। গাছের মতো ডালপালা মেলা একজন সজীব মানুষ।
সেবা প্রকাশনীর বইগুলোর মধ্য দিয়ে শেখ আবদুল হাকিম তাঁর লেখার জাদুতে হাতের মুঠোয় সযত্নে ভরে নিয়েছিলেন আমাদের কৈশোর।
এই দুজন মানুষের মধ্য দিয়ে আমারও দু-খণ্ডের মৃত্যু হল। এমন অনেক খণ্ড খণ্ড মৃত্যুর মধ্য দিয়েই আমরা যাই।
পরিণত বয়সে যে মানুষ মারা যায় সে আসলে তার অবশিষ্টাংশ।)
–মৃদুল আহমেদ