গাজীপুরের শ্রীপুরে অবরুদ্ধ বিজিবির গুলিতে ৬ আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে সেনা সদস্যদের সহায়তায় সড়কযোগে বিজিবি সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। এ সময় বিজিবির ২টি জিপ গাড়ি ও ২টি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

সোমবার দুপুরে উপজেলার ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় সৌখিন পরিবহণ বাসে হালুয়াঘাট থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বিজিবিদের বহনকারী ২টি বাসে থাকা ৮০ জন বিজিবি সদস্যকে আটক করে আন্দোলনকারীরা। খবর পেয়ে আশপাশ থেকে বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এসে বিজিবি সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। আত্মরক্ষার্থে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে মুহুর্মুহু গুলি চালায় বিজিবি সদস্যরা।

সোমবার শেষ বিকালে অবরুদ্ধ বিজিবি সদস্যদের উদ্ধারের জন্য ৩-৪টি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলের উপর দিয়ে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। এ সময় হাজার হাজার আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে অবতরণ করা সম্ভব হয়নি। পরে সেনা সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বিজিবির সদস্যরা সড়কপথে ঘটনাস্থলে এসে হাজার হাজার আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে অবরুদ্ধ বিজিবি সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বিজিবির বহনকারী ২টি বাস এবং বিজিবিকে উদ্ধার করতে আসা ২টি জিপ গাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দুপুরের পর থেকে আশপাশের এলাকার পরিবেশ থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বিজিবির গুলিতে নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মৃত আসাদের ছেলে সিফাতউল্লাহ (২২), শ্রীপুর পৌর এলাকার একটি মাদ্রাসার অধ্যয়নরত ছাত্র, শ্রীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দারোগারচালা গ্রামের শুক্কুর আলমের ছেলে শরীর আহমেদ (২০), ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার তাজুল ইসলামের ছেলে কাওসার (২৮), ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আব্দুল হাইয়ের ছেলে জুয়েল মৃধা (৩০)ও অজ্ঞাতনামা আরও দুইজন।

এ ছাড়া আজাহার (৩০), ফারুক (২৬), মারুফ (১৯), ইদ্রিস (৩০), রিয়াজ (২৪), স্বপন (৩৫), বাবুল (২১), জাকির (৫২), শামীম (৩০), রায়হানসহ (২৮) অজ্ঞাতনামা কমপক্ষে অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আহতরা মাওনা চৌরাস্তা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় কয়েকজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মাওনা চৌরাস্তা আলহেরা মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, এ পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় পাঁচজনের মরদেহ এসেছে। তাদের মধ্যে তিনজনের নাম পরিচয় জানা গেছে। অপর দুজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। এছাড়াও একজনের মরদেহ উপজেলা মাওনা এলাকায় তার আত্মীয় আরিফ সরকারের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এ হাসপাতাল থেকে গুলিবিদ্ধ ২২ জনসহ সর্বমোট ৫০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জারিন ফারাহ জানান, এ ঘটনায় বিকালের দিকে চারজন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছে।

সূত্রঃ যুগান্তর