শোবিজে কাজ করতে কে না ভালবাসে। বাস্তবতায় সেই স্বপ্নটা সবার জন্য সত্যি হয়ে উঠে না। সময় বদলের সঙ্গে চিত্রতারকা কিংবা টিভি তারকাদের পাশাপাশি এখন সমান গুরুত্ব পাচ্ছেন মডেলরা। একজন মডেলের গ্ল্যামারের দীপ্তি চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, তাঁদের চালচলন, ঝলমলে জীবনযাপন হাতছানি দেয় অন্য এক স্বপ্নের জগতের।

শুধু যশ খ্যাতি কিংবা ক্যামেরার ঝিলিক নয়। বর্তমান বিশ্বে একজন যোগ্য মডেলের টাকাও থাকে কাড়ি কাড়ি। আর এমন পথে হাঁটতে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলে। অসাধুদের খপ্পরে পরে সর্বশান্ত হয়। শোবিজ অঙ্গনকে ধিক্কার জানিয়ে বিদায় নেয়। তার জন্য সিড়ির প্রথম ধাপ থেকেই আপনাকে সাবধানে পা ফেলতে হবে। অনেক অসাধুদের ভিড়ে সঠিক স্থানটি বেছে নিতে হবে।

কীভাবে শুরু করা যায়?

"মডেলিং" স্বপ্ন সত্যি করতে যা প্রয়োজন

 

প্রথমে ছবি তুলতে হবে: একজন মডেল হতে প্রয়োজন একটি পরিপূর্ণ পোর্টফোলিও। এ ক্ষেত্রে একজন পেশাদার ফটোগ্রাফারকে দিয়ে একটি পোর্টফলিও বানাতে হবে। সাধারণ একটি পোর্টফোলিওতে থাকে মডেলের নানা অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি। এখানে সৌন্দর্যটা প্রাধান্য পায়।

সুন্দর তরুণীদের গ্রহণযোগ্যতা থাকে। তবে তাঁকে অবশ্যই বুদ্ধিমতী হতে হবে। মডেল হতে হলে প্রথমত যোগাযোগ করতে হবে যাঁরা মডেল ফটোগ্রাফিতে ভালো কাজ করছেন তাঁদের সঙ্গে। তাঁদের কাছে ছবি তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে যাঁর চেহারা ফটোজেনিক তিনি নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিতে পারেন। ছবি তুলে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে পারেন। অথবা সরাসরি বিজ্ঞাপন নির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি জমা দেয়া:

সুন্দর ছবি তুলে পরিপূর্ণ পোর্টফলিও তৈরি হয়ে গেলে বিভিন্ন এজেন্সিতে ছবি পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশ্ন জাগতে পারে ছবি পাঠাবেন কোথায়? সোজা উত্তর বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। বিশেষ করে নামকরা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোতে। আরও পাঠাতে পারেন বিভিন্ন বুটিক হাউসে এবং পত্রিকা অফিসগুলোতে।

প্রয়োজনে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। যেমন, মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এমন ফটোগ্রাফার, সাংবাদিক, আর্টস, ফ্যাশন হাউস অর্গানাইজার এমন কারও সঙ্গে। পোর্টফোলিওর সঙ্গে একটি সুন্দর পরিপূর্ণ সিভি জমা দিতে ভুলবেন না।

এক্ষেত্রেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পেশাদার আলোকচিত্রীর মাধ্যমে ছবি তুলতে হবে, যে স্থানগুলোতে বড় বড় এজন্সি নতুন ছেলেমেয়ের সন্ধান করে। যেমন বাংলাদেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ ফটোগ্রাফার ইকবাল আহমেদ, চঞ্চল মাহমুদ বা আশীষ সেনগুপ্তের কথা বলা যেতে পারে। এছাড়াও এ সময়ে রাফায়েল, কৌশিক ইকবাল, প্রিয়তু রেজা সহ বেশ কয়েকজন ফটোগ্রাফার ভালো ছবি তুলছে।

"মডেলিং" স্বপ্ন সত্যি করতে যা প্রয়োজন

মডেল: মাহবুবা রাখী

বর্তমান সময়ে বিজ্ঞাপন সংস্থা সেরাদের তালিকায় আছে এশিয়াটেক, গ্রে অ্যাডভারটেজমেন্ট, ইমপ্রেস, এক্সপ্রেশন, বিটপী, এডকম, ক্রিয়েটিভ মিডিয়া, মিডিয়াকম, মাত্রা, ইউনিট্রেন্ড, প্রবাহ। এসব প্রতিষ্ঠানের অনলাইন সাইটে গিয়ে সহজেই মেইল অ্যাড্রেস পেয়ে যাবেন। সেখানে আপনার বায়োডাটা ও পোর্টফোলিও জমা দেবেন।

এ যুগে ফেসবুকও গুরুত্পূর্ণ:

এ সময়ে মডেলদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক। এখান থেকেও অনেকের শুরুটা হয়। ফেসবুকে ছবি দেখে পছন্দ করে থাকে বিভিন্ন এজন্সির কর্তারা। সেক্ষেত্রে আপনার ফেসবুকের ছবিগুলো বুঝেশুনে ব্যাবহার করুন। অনেকেই ফেসবুকের ছবি দিয়ে ঝড় তোলে। কিন্তু মডেলিংয়ের জন্য প্রয়োজন সঠিক গ্রুমিংও।

মডেল হতে পারেন আপনিও: এখন বিজ্ঞাপনচিত্রের ভাষা বদলে গেছে। এখন মোটামুটি ফটোজেনিক হলেই চলে। তবে তাঁকে অবশ্যই অভিনয় জানতে হবে। আর কাজ করতে হলে সন্ধান করতে হবে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলোর।এটা গ্ল্যামার ওয়ার্ড । তাই পায়ের নখ থেকে চুল পর্যন্ত থাকতে হবে ফিট । সফল মডেল হতে হলে অবশ্যই নিজের একটা স্টাইল ও ইমেজ দাঁড় করাতে হবে । নিজের মতাে করে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে হবে । আর সবসময় শরীরটাকে ফিট রাখতে হবে ।

enewsup modeling mahbuba rakhi

মডেলঃ মাহবুবা রাখী

  • মডেলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বেশভূষা , চুলের স্টাইল , হাঁটাচলা , দাঁড়ানাের ভঙ্গি , চোখের চাহনি ও ভুবন ভােলানাে হাসি     । আর যে বিষয়টি য্যেয়াল রাখতে হবে তা হলাে শুদ্ধ উচ্চারণ । মডেল হতে হলে অবশ্যই বাংলা ও ইংরেজি দুটো ভাষাকেই শুদ্ধভাবে আয়ত্ত করতে হবে ।

  • সব সময় কাজ নিয়ে ভাবতে হবে । বিভিন্ন ক্যাটালগ ও ম্যাগাজিন মনােযােগ দিয়ে দেখতে হবে । একাপ্রেশনগুলাে দেখে চর্চা করতে হবে । বিজ্ঞাপন দেখে অনুশীলন করতে হবে । সফল মডেলদের জীবনকথা ও টিপসগুলাে মনােযােগ দিয়ে নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে ।

আমাদের দেশের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রিকে সাধারণ মূল তিনটি ধরনে বিভক্ত করা যেতে পারে। টিভি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেলিং, ফ্যাশন হাউসের জন্য মডেলিং ও র‌্যাম্প মডেলিং। এই তিনটি ধরনকে এক করে দেখলেও ক্ষতি নেই। কারণ এই ৩টি ক্ষেত্রেই বিচরণ করেছেন এমন মডেলের সংখ্যাও নগন্য নয়।

বর্তমান সময়ের এ পেশায় সুনাম, সুখ্যাতি তো আছেই। আরো আছে উন্নত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা। আমাদের দেশে নব্বইয়ের দশকের আগেও মডেলিংয়ের ব্যাপকতা দেখা যায়নি।

বর্তমানে মডেলিং একটি স্বাভাবিক বিষয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও টিভি চ্যানেল বেড়ে যাওয়ার ফলে মডেলিংয়ের ব্যাপকতাও বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্যাশন হাউসের জন্য মডেলিং, বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেলিং ও র‌্যাম্প মডেলিং-

rakhi modeling enewsup

ফ্যাশন হাউসের জন্য মডেলিং:

বর্তমানে ফ্যাশন হাউজের জন্য বছরের বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে প্রচুর মডেল প্রয়োজন হয়। ঈদ, পূজা, নববর্ষ ও বিভিন্ন দিবসের পোশাকের প্রদর্শনীর জন্য মডেলদের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি।

প্রসিদ্ধ ফ্যাশন হাউজগুলো প্রমিন্যান্ট মডেলদের দিয়ে পোশাকের প্রদর্শনীর ফটো তুললেও অনেক নতুন ফ্যাশন হাউজদেরকেই নির্ভর করতে হয় নতুন মডেলদের উপর।

এর কারণ হিসেবে বলা যায়, প্রমিন্যান্ট মডেলরা যে কোন হাউজের ফটোসেশনে বেশ মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন যেটি নতুন ফ্যাশন হাউজগুলোর জন্য অনেক সময় বাজেটের অধিক হয়ে দাঁড়ায়।

অপরদিকে নতুন মডেলরা প্রচারের তাগিদে এক্ষেত্রে অনেক কম অর্থের বিনিময়েই এসব নতুন ফ্যাশন হাউজের ফটোসেশন করে থাকেন। এজন্য সামগ্রিকভাবে বলা যায়, নতুন মডেলদের ক্ষেত্র হিসেবে ফ্যাশন হাউসের জন্য মডেলিং নতুন দিগন্ত হিসেবে উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেলিং:

বিশ্বজুড়েই পণ্যের প্রচারের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে বিজ্ঞাপনচিত্র। একটি পণ্য কত সহজ ও সফল উপায়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো যায়, তা নিয়েই এখন চলছে প্রতিযোগিতা। ফলে নতুন নতুন ধারণা ও কাঠামোর সংযোজন ঘটছে এ মাধ্যমটিতে।

তবে ধারণা বা কাঠামোতে যতই সৃজনশীলতার খোরাক থাকুক না কেন, আসল কথা হলো সৃজনশীল মোড়কে একটি পণ্যকে নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়া। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্য বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে মার্কেটিং-এর বিভিন্ন থিওরির সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারার মধ্যেই ঐ বিজ্ঞাপনটির সাফল্য নিহিত।

তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত