ভারতের মণিপুর রাজ্যে নগ্ন করে যে দুই নারীকে রাস্তায় হাঁটানো হয়েছে, তাদের একজনের অভিযোগ গণমাধ্যমে এসেছে। সেই নারী জানান, পুলিশই তাদের ওই উন্মত্ত তরুণদের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন তিনি।

গত ৩ মে সহিংসতা শুরুর পরের দিন ৪ মের একটি ভিডিও ফুটেজ গত বুধবার রাতে প্রকাশ্যে আসে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তরুণদের একটি দল গ্রামের রাস্তা দিয়ে দুই নারীকে হাঁটিয়ে ধানখেতে নিয়ে যাচ্ছে। দুই নারী সম্পূর্ণ নগ্ন এবং হাঁটতে হাঁটতেই তরুণদের কয়েকজন দুই নারীকে যৌন নিগ্রহ করছেন। দুই নারী কাঁদছেন ও তাদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করছেন।

সংক্ষিপ্ত ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, নারীদের ধানখেতের ভেতর দিয়ে অজ্ঞাত কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই দুই নারীর একজন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

ঘটনার ১৫ দিন পর গত ১৮ মে থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ। গত বুধবার সেই ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর গোটা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, দুই নারীর মধ্যে একজন ‘দিনদুপুরে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার’ হন।

মণিপুর রাজ্যে দুই নারী

ছবিঃ বিবিসি

অভিযোগ থেকে জানা যায়, উচ্ছৃঙ্খল জনতা ওই দুই নারীর গ্রামে যখন হামলা করে, তখন একদল নারী নিরাপত্তার শঙ্কায় পালিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নেয়ার সময় হামলাকারী জনতা পুলিশকে থামিয়ে তাদের তিনজনকে ছিনিয়ে নেয়।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, ছিনিয়ে নেওয়া তৃতীয় নারীর বয়স প্রায় ৫০ বছর। তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যিনি, তার বাবা ও ভাইকেও দুর্বৃত্তরা ছিনিয়ে নেয়। ১৯ বছরের ভাই তার বোনকে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করলে তাকে হত্যা করা হয়।

বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ওই সময় পুলিশ তাদের নামমাত্র সুরক্ষা দিয়েছিল।

ওই নারী তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোনে বলেন, পুলিশ সেই লোকগুলোর পক্ষে ছিল, যারা আমাদের গ্রামে হামলা করছিল। পুলিশ আমাদের বাড়ির কাছ থেকে তুলে নিয়ে গ্রাম থেকে একটু দূরে নিয়ে যায় এবং আমাদের রাস্তায় উন্মত্ত ব্যক্তিদের ভেতরে ঠেলে দেয়। পুলিশই আমাদের তাদের কাছে তুলে দেয়।

ওই নারীর স্বামী ইন্ডিয়া টিভিকে বলেন, এ ঘটনা তার জীবনে ‘দুঃস্বপ্নের মুহূর্ত’। এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটতে পারে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, সেই উচ্ছৃঙ্খল জনতা হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র হাতে ‘জন্তুর মতো’ এসেছিল। তারা নারীদের আলাদা করে তাদের সঙ্গে নিয়ে যায় ও নগ্ন হতে বাধ্য করে। উল্লেখ্য, ওই নারীর স্বামী সেনাসদস্য ছিলেন।

সূত্রঃ ভোরের কাগজ