Home তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত স্মার্টফোন কোম্পানী “বিবিকে”!

বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত স্মার্টফোন কোম্পানী “বিবিকে”!

98
0

বিশ্বের র্সবাধিক স্মার্ট ফোন বিক্রিতে কোন কোম্পানী এগিয়ে ? জিজ্ঞেস করলে এক নামে আসবে এ্যাপল কিংবা স্যামসাং এর নাম। কিন্তু আসলে কি তাই?

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী স্মার্ট ফোন বিক্রী করে বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স! অবাক হচ্ছেন আসুন জেনে নিই…

বিবিকে ইলেকট্রনিক্স মূলত কারা?

বিবিকে ইলেকট্রনিক্স হলো মুলত চাইনিজ ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি, যাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৯০ সালে। ডুয়ান ইয়ংপিং হলেন এই বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ঐ সময়েও একজন সাক্সেসফুল বিলিওনার ছিলেন গেইমিং কন্সোল ‘সাবুর’ এর মাধ্যমে। এই সাবুর ছিলো তখনকার সময় নিনটেন্ডো-এর সবচেয়ে বড় কম্পিটিটর। এরপর ১৯৯৫ সালে তিনি কোম্পানিটি ছাড়ার পর শুরু করেন বুবুগাও নামের প্রতিষ্ঠান যা পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে পরিণত হয় বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স-এ।

ডুয়ান ইয়ংপিং

ডুয়ান ইয়ংপিং মাত্র ৩৯ বছর বয়সে অবসর নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া চলে গেছেন। গত ২০ বছর ধরে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া শহরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। এবং তিনিই এই মূহুর্তে এ্যাপল কোম্পানীর সবচেয়ে বড় শেয়ার হোল্ডার। তিনি সবসময়ই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন।

বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে প্রায় ১৭ হাজারেরও অধিক কর্মী। যদিও বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স-এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো সিডি, এমপিথ্রি, এবং ডিভিডি প্লেয়ার তৈরির মাধ্যমে। এছাড়াও তারা হাউজহোল্ড অ্যাপলাইয়েন্সও তৈরি করতো। এরপর ২০০৪ সালে টনি চ্যান এর সাথে প্রতিষ্ঠা করেন ওপ্পো। এই ওপ্পো তখনও স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেনি। ওপ্পো তখন ডিভিডি এবং ব্লু-রে প্লেয়ার তৈরি করতো।

বিবিকের হাত ধরে ভিভোর উত্থান-

ডুয়ান তখন একের পর এক সফল প্রতিষ্ঠান তৈরি করেই চলেছেন। যাত্রার এই পথে ২০০৯ সালে তিনি এবং শেন ওয়েই এর সাথে যৌথ ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ভিভো।  তবে ২০০৯ সালে এবং এর পরবর্তী সালেও বিশ্ব ভিভোর কোন প্রকার স্মার্টফোন দেখেনি। ভিভো তাদের প্রথম স্মার্টফোন লঞ্চ করেন ২০১১ সালে। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আল্ট্রা-স্লিম স্মার্টফোন তৈরি করা। এই ভিভো মার্কেট-এর ধরণ বুঝে বেছে নিলো মিডরেঞ্জের ফোন তৈরি করার পন্থা। কারণ তারা দেখলো এই বাজেটে তখন খুব ভালো স্মার্টফোন নেই।

অ্যাপল এবং সামস্যাং সহ অনেকে তখন হাই-রেঞ্জের স্মার্টফোন তৈরির প্রতিযোগীতায় জড়ালেও ভিভো মিডরেঞ্জকে টার্গেট করলো। যদিও ভিভোর মার্কেটে প্রবেশ করেছিলো মিডরেঞ্জকে টার্গেট করে, বর্তমানে তারা হাই-ফ্লাগশিপের দিকেও ঝুঁকেছে এবং মার্কেটে বেশ ভালো অবস্থান তৈরি করছে।

রিয়েলমির উত্থান-

স্মার্টফোন বাজারে মিডরেঞ্জ টার্গেট করলেও বেশ কিছুদিন যাবত শাওমির অস্বাভাবিক মার্কেট গেইনের কারণে বিবিকে একটু ঝেঁকে বসলো। তারা আরও অ্যাগ্রেসিভ ভাবে মার্কেটে ডমিনেট করার জন্য বাজারে নিয়ে আসলো রিয়েলমি। এই রিয়েলমি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্কাই লি, যিনি পূর্বে ছিলেন ওপো ইলেকট্রনিক্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, এর হাত ধরে।

তারা মূলত শাওমির জন্য সবচেয়ে বড় কম্পিটিটর ছিলো। শাওমির বাজার বিশ্লেষণ করে আরও অ্যাগ্রেসিভ লেভেলের স্মার্টফোন তৈরি করে বেশ সাড়া ফেলেছিল। ফলস্বরূপ, তারা ২০১৯ সালে বেস্ট স্মার্টফোন অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছিলো।

ওয়ানপ্লাসের উত্থান-

বলা হয়ে থাকে ওয়ানপ্লাসের শুরু ডুয়ান-এর হাত ধরে হয়নি। তবে ডুয়ানের প্রতিষ্ঠান ওপো’র ভাইস প্রেসিডেন্ট পেটে লউ, এবং কার্ল পাই দুজন মিলে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ওয়ানপ্লাস। মূলত ওয়েস্টার্ন এবং ইউরোপে চাইনিজ স্মার্টফোনের ভালো সুনাম অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।

কারণ কোন চাইনিজ স্মার্টফোন আইফোন, সামস্যাং-এর মত জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানে ফ্লাগশিপ লেভেলে কমপিট করতে পারছে না। এই গ্যাপটি যখন তারা খুঁজে পেলো তখন তারা এই প্রিমিয়াম মডেলের ওয়ানপ্লাস ওয়ান সিরিজ চালু করে। যদিও বর্তমানে তারা মিডরেঞ্জের বাজার দখলের জন্য নর্ড নামের আরেকটি মডেলের ফোন বাজারে নিয়ে এসেছে। অনেকটা আইফোনের এসই ভার্সনের আদলে তৈর তাদের এই মডেল।

গ্লোবাল মার্কেটে বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স-এর অবস্থান-

বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স একসাথে অনেক বড় প্রতিষ্ঠান তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাদের বিশ্ববাজারে প্রতিনিয়ত আধিপত্ত বাড়ছে। বিশেষ করে ওয়েস্টে ওয়ানপ্লাস বেশ সুনাম অর্জন করতে পেরেছে। মার্কিন বাজারে ফ্লাগশিপ হিসেবে ওয়ানপ্লাসের অবস্থান বেশ নজরকাড়ার মত। যা এর আগে কোন প্রকার স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দেখাতে পারেনি। ২০২১ সালের প্রথম কোয়াটারে ওয়ানপ্লাসের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪২৮ শতাংশ। গুগল পিক্সেলের মিডরেঞ্জের ফোন গুলোর সাথে বেশ ভালো পাল্লা দিচ্ছে এই ওয়ানপ্লাসের নর্ড ভার্সন গুলো।

এছাড়াও ওয়ানপ্লাস ইউরোপ-এর বাজারে ২ শতাংশেরও অধিক মার্কেট শেয়ার রয়েছে। যেহেতু ওয়ানপ্লাস শুধুমাত্র ফ্লাগশিপ লেভেলের জন্য বিখ্যাত, সেই তুলনায় এই ২ শতাংশও অনেক ভালো মার্কেটশেয়ার বলতেই হয়।

ওপো এবং ভিভোর ইন্টারন্যাশাল মার্কেটশেয়ার আরও বেশ দৃঢ়। বিশ্ববাজারে ২০২১ সালের প্রথম কোয়াটার অবধি ওপো’র মার্কেটশেয়ার ১১ শতাংশ। এছাড়াও ভিভোর রয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি মার্কেটশেয়ার গ্লোবাল মার্কেটে।

যেখানে অ্যাপলের মোট মার্কেটশেয়ার ১৭ শতাংশ ২০২১ সালের প্রথম কোয়াটার অবধি। সেখানে ওপো এবং ভিভো’র সম্মিলিত মার্কেটশেয়ার ২১ শতাংশ। যা অ্যাপলের মোট বিক্রির চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। এর মাধ্যমে বোঝা যায় আসলে গ্লোবাল মার্কেটে বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স-এর অবস্থান।

এছাড়া যদি আলাদা ভাবে চিন্তা করা হয়, তাহলে ওপো অ্যাপলের মোট মার্কেটশেয়ারের থেকে সামান্য পিছিয়ে।

ওয়ার্ল্ডের প্রথম সারির স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারারদের কথা বলতে গেলে এখন থেকে অ্যাপল, সামস্যাং, এবং হুয়াওয়ের আগে বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স এর নাম নেয়া যেতেই পারে।

এতকিছুর পরও কেন বিবিকে সম্পর্কে অনেকের অজানা-

যেহেতু ওপো, রিয়ালমি, ওয়ানপ্লাস এবং ভিভো’র মত জনপ্রিয় স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারারের পেরেন্ট কোম্পানী তাও বেশিরভাগ মানুষের এই কোম্পানীর ব্যপারে অজানা। এছাড়াও তাদের আরেকটি রিসেন্ট প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইকুউ(iQOO)।

এই সবগুলো প্রতিষ্ঠানের মিলে ওয়ার্ল্ড মার্কেটের প্রায় ১৯ শতাংশ শেয়ার দখলে ছিলো ২০২০ সাল নাগাদ। এছাড়াও বিবিকে ইলেট্রনিক্স ইন্ডিয়ার নাম্বার ওয়ান স্মার্টফোন সেলার ব্রান্ড। ইন্ডিয়াতে বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স এর মার্কেট শেয়ার প্রায় ৪৩ শতাংশ।

মূলত বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স সাব-ব্রান্ডের মাধ্যমে মার্কেটে অগ্রাসনের কারনে বিশ্বে সাব-ব্রান্ড গুলোই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তাদের এই মার্কেটিং পলিসির কারণে শাওমির মত প্রতিষ্ঠানকে তারা পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। তাদের বিশ্ববাজারে দিন দিন আরও শক্তভিত স্থাপন হচ্ছে।

বিবিকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড়  স্মার্টফোন কোম্পানী।

তথ্য সূত্রঃ droid explore, Techsci guy.