মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে জনশক্তি রফতানির অনুমোদন রয়েছে মাত্র ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সির। অথচ শ্রমিক পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক হাজারের বেশি এজেন্সি। এমনকি লাইসেন্স নবায়নেরও প্রয়োজন মনে করছে না অনেক প্রতিষ্ঠান।
মোহাম্মদ মিজান নামে এক ভুক্তভোগী লাখ লাখ টাকা খরচ করার পর জানতে পারেন, ৩১ মে থেকে শ্রমবাজার বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়া। সেই থেকে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। কীভাবে বিদেশ যাবেন বা টাকা ফেরত পাবেন, কিন্তু এখনও মেলেনি সমাধান।
সময় সংবাদকে মিজান বলেন, শ্বশুরবাড়ির জমি বন্ধক করে বিদেশ যাওয়ার টাকা জোগাড় করেছিলাম। চারজনের একটি গ্রুপে ৭ লাখ টাকা জমা দিয়েছি। এরমধ্যে আড়াই লাখ টাকা আমার। তবে এখনও সেই টাকা উঠাতে পারিনি।
মিজানের মতোই মালয়েশিয়া যেতে বিক্রি করেছেন কেউ শেষ সম্বল, কেউ নিয়েছেন উচ্চ সুদে ঋণ, জমা দিয়েছেন এজেন্সিতে। তারা জানান, বিদেশ যাওয়ার জন্য বাড়ি-গাড়ি বন্ধক বা বিক্রি করে টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু বিদেশ যেতে না পারায় এখন শেষ সম্বলটুকুও হাতছাড়া।
অভিযুক্ত এমন একটি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম ইস্টার্ন বিজনেস লিমিটেডে। জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার ওয়েবসাইটে দেয়া ঠিকানায় মেলেনি প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব। খোঁজ নিয়ে নতুন ঠিকানায় গেলেও মালিকদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এমন দাবি করে মুঠোফোনে নিজেদের পক্ষে সাফাই গান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়ালীউল্লাহ। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, শিগগিরই বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। যারা মালয়েশিয়া যেতে চায় তাদের পাঠানো হবে, আর যারা যেতে না চায় তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে।
একইভাবে বায়রার ওয়েবসাইটে দেয়া ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরে খুঁজে পাওয়া যায়নি আরেক এজেন্সি আহাদ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে। স্থানীয়রা জানান, ওই ঠিকানায় কখনোই ছিল না আহাদ ইন্টারন্যাশনালের অস্তিত্ব।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য, ২০১৩ সালের পর লাইসেন্সই নবায়ন করেনি ইস্টার্ন বিজনেস। আর প্রতিষ্ঠানটির সদস্যপদ ২০২০ সালে বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি বায়রার। সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ইস্টার্ন বিজনেস মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অথোরাইজড লাইসেন্সকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। তারা প্রতারণা করে গ্রাহকদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
তথ্য বলছে, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির বৈধতা আছে কেবল ১০১টি এজেন্সির। শ্রমিক পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ থাকা অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা এসেছে সময় সংবাদের হাতে। প্রশাসনের নাকের ডগায় কীভাবে চলছে এমন কর্মকাণ্ড, এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিংবা বিএমইটি।
প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রামরু বলছে, প্রতারক এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, লাইসেন্স বাতিল একটি সাধারণ শাস্তি। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন, প্রতারণা ও অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ যে ধরনের অপরাধ করছে, তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা দরকার।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ রেখেছে মালয়েশিয়া। সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে বাজার খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
সূত্রঃ সময় সংবাদ