ঢালিউডের অমর নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর ২৫ বছর পরও যার অভিনীত ছবি এখনো সমানভাবে প্রিয় দর্শক-ভক্তদের কাছে। যাকে বলা হয় বাংলা ছবির ফ্যাশন আইকন।

জীবদ্দশায় মাত্র ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এ নায়ক। আজ তার ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।

২৫ বছর আগের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলা সিনেমার কালজয়ী নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে সমকালীন ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গনে সব থেকে বড় শূন্যতা তৈরি করে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি।

আত্মহত্যা করেছেন তিনি- এই মর্মে কয়েকবার তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদনও দাখিল করেছেন আদালতে। যদিও তার পরিবার অর্থাৎ মা নীলা চৌধুরী এখনো সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা মানতে নারাজ। তার মতে খুন হয়েছেন এ নায়ক। সবকিছু ছাপিয়ে তার মৃত্যু এখনও রহস্যের আড়ালেই রয়ে গেছে। এদিকে প্রিয় নায়কের স্মরণে দেশজুড়ে সালমানের ভক্তরা নানা আয়োজন হাতে নিয়েছেন।

দোয়া, মিলাদ মাহফিলের মধ্যে প্রিয় নায়কের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হবে বলে জানা গেছে। সালমানের প্রয়াণ দিনে তার অবদান ও স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিও।

এটি অনুষ্ঠিত হবে এফডিসির শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। এছাড়া টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আজ এ নায়কের স্মরণে তার অভিনীত ছবি প্রচার করবে বলে জানা গেছে।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দাড়িয়াপাড়ায় অবস্থিত নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। তার পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড় ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন কণ্ঠশিল্পী। ইমন নামে অভিনয় জীবন শুরু হয় বিটিভিতে শিশুশিল্পী হিসেবে।

মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের চলচ্চিত্র-জীবনে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সালমান শাহ ঢাকাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকে যারা বয়সে ছিলেন কিশোর-তরুণ, তাদের অনেকের হৃদয়েই সালমান শাহ বাংলাদেশের ‘সেরা রোমান্টিক অভিনেতা’ হয়ে থাকবেন। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মধ্য দিয়ে শোবিজে আসেন সালমান শাহ। ১৯৯৩ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। প্রথম ছবিই তাকে ঢালিউডের প্রথম শ্রেণির নায়ক করে তোলে।

এরপর ক্রমেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন তিনি! শুটিংয়ে যাওয়ার সময় সালমান শাহের সঙ্গে ব্যক্তিগত একটি ব্রিফকেস থাকত সবসময়। যার ওপরে লেখা থাকত ‘সালমান, দ্য শ্যাডো অব ইমন’। তাতে থাকত সিডিউলের সব কাগজপত্র ও ডায়েরি। মানুষ ও নায়ক, সালমান শাহের দ্বৈত সত্তা। তার জন্ম, সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা, সামিরার সঙ্গে প্রেম-বিয়ে, শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক রহস্য, তারকা খ্যাতি, অতঃপর অমীমাংসিত মৃত্যু।

প্রথম ছবির পর থেকে সালমানের ক্যারিয়ারে একের পর এক যোগ হতে থাকে সাফল্যের পালক। এ যেন এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। প্রথম ছবি থেকে শুরু করে শেষ ছবিটি পর্যন্ত সমানতালে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন সালমান শাহ। বাংলা চলচ্চিত্রের সাফল্যের রাজপুত্র হিসেবেও সালমানকে অভিহিত করা হয়। প্রথম ছবিতে মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও পরে শাবনূরের সঙ্গেও একটি সফল জুটি গড়ে ওঠে সালমানের।

এসব জুটির একেকটি ছবি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে আছে। এছাড়া তার সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি। সালমান শুধু অভিনেতাই ছিলেন না, চলচ্চিত্রের নতুন ধারার প্রবর্তকও ছিলেন তিনি। একক কৃতিত্বে সামাজিক-অ্যাকশনধর্মী ও নিটোল প্রেমের ছবির নতুন একটি ধারার সঙ্গে সবাইকে পরিচিত করেছিলেন তিনি।