“নেত্র তাহার কাজল কালো, টানা টানা আখিঁ, মায়াবীনি তনয়াটারে চোখের তারায় রাখি । দৃষ্টিতে প্রেম ঝরে, হাসিতে স্নিগ্ধতা, যতই দেখি তারে, ঘিরে ধরে মুগ্ধতা । ”
মায়াবী চোখ নিয়ে এরকম আরো অনেক কবিতা ও গান আছে যা প্রকাশ করে যে মানুষের চোখ তার মনের কথা বলে । চোখ যেন মনের আয়না । যার চোখ যত সুন্দর তার মুখাবয়বও তত আকর্ষণীয় হয় । তাই তো মুখের সাজের ক্ষেত্রে চোখকে অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।
এই আর্টিক্যালের ছবির মডেল “মান্তাশা নুর” এর মায়াবী চোখে চশমা তাকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে । যা তার প্রতিটি ছবিতে প্রথমেই তার মায়াবী সুন্দর চোখের দিকে সবার নজর পড়বে এটা নিশ্চিত ।
একটা সময় শুধু প্রয়োজন মেটাতেই চশমা পরার চল ছিল । চেহারায় চশমা মানাচ্ছে না বলে অনেকে ল্যাসিক করিয়ে নিয়ে চশমা পরাটাই ছেড়ে দিয়েছেন । তবে আজকাল চশমাটাও যেন হয়ে উঠেছে ফ্যাশনের অনুষঙ্গ ।
যাঁদের জন্য চশমা খুব জরুরি কিছু নয়, ফ্যাশনের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে তাঁরাও এখন পরছেন চশমা । তবে প্রয়োজনে হোক কিংবা নিছক শখের বশে, ভারী ফ্রেমের চশমায় ভারিক্কি চালে হেঁটে চলার দিন শেষ হয়ে গেছে বহু আগেই । বন্ধুদের আড্ডায় বা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সময় হালকা চশমায় নানান রঙের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে বেশ । অফিস কিংবা ক্লাসে ব্যবহার করার চশমাটি হয়তো নৈমিত্তিক, তবে ঘোরাঘুরির সময় সেসব আর থাকছে কোথায় বলুন? তখন নানান রং আর নানান ঢঙের চশমা থাকছে চোখে ।
কেউ পরছেন সাদা- কালোয় ডোরাকাটা চশমা, তো কারও চশমায় আবার খয়েরি রঙের ছোপ । পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নীল, গোলাপি, বেগুনি, কমলা রঙের চশমাও ব্যবহার করেন অনেকে । কেউ কেউ আবার পছন্দ করেন হ্যালো কিটি চশমা । হ্যালো কিটির বো- এর মতো একটি বো ফ্রেমের একপাশে থাকাটাই হ্যালো কিটি চশমার বৈচিত্র্য । কেউ কেউ আবার হ্যালো কিটির বো- এর মধ্যে তারকাখচিত চশমাও পছন্দ করছেন । উৎসব অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিদিনের কর্মক্ষেত্রেও অধিকাংশ নারীদের চোখে কাজল বা আইলাইনার পরতে দেখা যায় । যা তার আত্মবিশ্বাস ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ ।
তবে যারা চশমা পরে তাদের চোখের সাজটা কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে হয়তো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতে পারে । আর চশমার সঙ্গে চোখের সাজের ব্যাপারে কোনো আপোস করা যাবে না । চশমার বিকল্প হিসেবে অনেকে লেন্সও ব্যবহার করেন । বিশেষ করে উৎসব অনুষ্ঠানে কিছুক্ষণের জন্য হলেও লেন্স পরে, কেননা চশমা পরা চেহারাটা মানুষের সামনে আনতে চান না । এক্ষেত্রে অভ্যস্ত না থাকায় তাদের চোখে চুলকানি, পানি পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
এছাড়াও যারা বিয়ের কনে তাদের জন্য চশমা একটা বাড়তি চিন্তা হয়ে থাকে এবং ভাবনায় আসে কিভাবে চশমা ছাড়া বিয়ে করা যায়! এদিকে চশমা খুলে ফেললে সব ঝাপসা! তাই উপায় না পেয়ে অনেকেই লেন্স পরেন বিয়ের দিন । অভ্যস্ত না হওয়ায় নানা রকম সমস্যায় বিব্রত হতে হয় । তাই বেশি কিছু না ভেবে আপনি যেমন চশমা পরে থাকেন তেমনই থাকুন, শুধু মেকআপের সময় সচেতন হোন কিভাবে চোখকে সুন্দর করা যায় ।চশমা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত সাজের মাধ্যমে আপনার দিক থেকে চোখ সরাতে পারবে না অন্যরা । বিয়ের সাজে অনেকেই প্রচুর মেকআপ করেন তবে যত ছিমছাম সাজবেন তত আপনাকে দেখতে মিষ্টি লাগবে । ভারি মেকআপের সঙ্গে চশমা বেমানান লাগে । তাই হাল্কা মেকাপের সঙ্গে চোখের সাজ একদম নিখুঁত হতে হবে ।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, চশমার ফ্রেমের আকৃতিতেও এসেছে বৈচিত্র্য । বিশেষ একটি আকৃতির চশমার নাম ক্যাটস আই চশমা । দোকানগুলোতে রয়েছে নানান রঙের ক্যাটস আই চশমা । চারকোনা ফ্রেম বা একটু গোলাকৃতির ফ্রেমও চলছে বেশ ।
চশমার ফ্রেমের উপাদানেও এসেছে বৈচিত্র্য । মেটালের তৈরি চশমার জনপ্রিয়তা আর আগের মতো নেই । সেলুলাইটের তৈরি ফ্রেম আজকাল চলছে বেশ । চশমার ফ্রেম এখন এমনভাবে তৈরি হচ্ছে, যেন দীর্ঘদিন চশমা ব্যবহার করলেও চোখের কোনায় খুব বেশি দাগ না পড়ে । কোনো চশমার সামনের ও পেছনের অংশের রঙে রয়েছে বৈপরীত্য । কালোর সঙ্গে লাল, হলুদ, সবুজ, বেগুনি কিংবা নীল রঙের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে বেশ ।
রঙের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে নানান কারুকাজ । বিভিন্ন রঙের ছোপ আছে, এমন ফ্রেমের চশমা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন । এমনকি কাপড়ের মতো চেক বা স্ট্রাইপের ডিজাইনও দেখা গেল চশমার ফ্রেমে । কোনো চশমার পুরো ফ্রেমটা জুড়ে ডিজাইন, আবার কোনোটিতে ডিজাইন শুধু পেছনের অংশে । কিছু চশমায় আবার দেখা গেল পুঁতির ব্যবহার ।
প্রায় সব চশমার দোকানেই এখন পাওয়া যাচ্ছে বাহারি এসব চশমা । শুধু সাদা বা শুধু কালো রঙের ফ্রেমও কিনছেন অনেকে । দোকানে গিয়ে চশমা কেনার পাশাপাশি কেউ কেউ আবার অনলাইনেও চশমা কিনছেন ।
দীর্ঘদিন ধরে চশমা পরলে একটা অভ্যাস হয়ে যায় সেই অভ্যাস ছেড়ে নতুন কিছু ট্রাই না করে চোখকে সুন্দরভাবে সাজাতে হবে । চশমা পরা নারীরা বিশেষ করে নিজের ভ্রু দুটিকে সুন্দর, মোটা, অল্প বাঁকানো আর পরিষ্কার শেপে রাখুন । চশমার ওপর দিয়ে সবার আগে আপনার ভ্রুর দিকেই নজর যাবে, তাই বাড়তি যত্ন নেয়া প্রয়োজন । আপনার মূল্যবান চোখ দুটোকে বিশ্রাম দিন । পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং অযাচিত মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে ।
— মোহাম্মদ মহসীন
Aninda, Sub-Editor