বর্তমান সময়ের বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি আসাদ চৌধুরী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কানাডার টরেন্টোর স্থানীয় একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কবির জামাতা নাদিম ইকবাল।
পারিবারিক সূত্র মতে, বাংলা একাডেমি এবং একুশে পদক প্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ‘কিছুদিন আগে এনজিওগ্রাম করে দুটি ব্লকের ৯৯ ও ৮৮ শতাংশ সারানো হয়েছে। তারপর কবি বাসায় ছিলেন, ভালো ছিলেন। হঠাৎ তার শরীর খারাপ করলে কানাডার ওসোয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাদিম ইকবাল সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, কয়েক দিন আগে কবির প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হওয়ায় খুব সিরিয়াস অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া লাইফসাপোর্টের প্রসঙ্গও তোলেন চিকিৎসক। আমরা সবাই ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়ি। বুঝতে পারি তার ফুসফুসের অবস্থা শোচনীয়।
আইসিইউয়ে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর (ব্রিদিং মেশিন), যাকে হাইড্রো ভেন্টিলেটরও বলা হয়ে থাকে, সেটা পরিয়ে দেয়া হয়। আইসিইউয়ে থাকার পর তাকে সিসিইউয়ে নেয়া হয়। ফুসফুস ও হার্ট দুটিরই খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থা। তিনি গত বছর নভেম্বর থেকে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
কবি আসাদ চৌধুরী বেশ কয়েক বছর ধরে সপরিবারে টরন্টোতে বসবাস করছেন। তিনি ১৯৪৩ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী এবং মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
কবি তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গী, টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। এছাড়া তিনি তার ভরাট কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেও মানুষের মন জয় করেছেন। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অণুবাদকর্মে তার অবদান প্রণিধানযোগ্য। ১৯৮৩ সালে তার রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ “সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু।”
কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর চাকুরি জীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।
পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকুরির পর এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
Aninda, Sub-Editor