ছয় মাসের মাহিন হোসেনকে এক বৃদ্ধা ভিক্ষুকের কাছে রেখে যান মা সুরমা বেগম। ‘একটু আসি’ বলে সারাদিনেও কোলের শিশুটিকে নিতে আসেননি তিনি। পরিবারের খোঁজ না পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক দম্পতিকে তার দায়িত্ব দেয় পুলিশ।

বুধবার দুপুরের (১ মার্চ) দিকে ভিক্ষুকের কাছে শিশুটি রেখে যাওয়া সুরমা বেগমের অবশেষে খোঁজ মেলে পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে। অবশ্য ৩২ বছর বয়সী এই নারী পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, পারিবারিক কলহ আর মানসিক দুশ্চিন্তায় ভিক্ষুকের কাছে ফুটফুটে সন্তানকে রেখে ভুলে চলে গিয়েছিলেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের সদরে। সুরমা বেগমের বাবার বাড়ি সদরের ভবানীগঞ্জ চরমনসা গ্রামের মিয়ারবেড়ি এলাকায়। ভাড়া থাকেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাঞ্চানগর এলাকায়। তার স্বামী রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা গ্রামের বাসিন্দা মিরন সৌদি প্রবাসী।

তবে বৃহস্পতিবার রাতে মাহিনকে সুরমা বেগমের কাছে হস্তান্তর করেনি পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে।

রাতে পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, ‘এখনই আমরা শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করছি না। আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হবে। শিশুটি বেলাল হোসেন ও নিশি আক্তার দম্পতির হেফাজতে রয়েছে।’

এসপি ছাড়াও এ সময় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির জেলা সভানেত্রী সেলিনা মাহফুজ, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন ও জেলা কমিউনিটিং পুলিশের সদস্য সচিব জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান শিশুটির মা ও দাদা হাফিজ উল্যার সঙ্গে কথা বলেন।

স্বজনদের ভাষ্য, মিরন-সুরমা দম্পতির সংসারে আরও তিন মেয়ে রয়েছে। মিরন সৌদি আরবে থাকেন। চার বছর আগে বাড়িতে আসেন। ধারদেনা করে ও ঋণ নিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। প্রায় ৭-৮ মাস আগে ফের তিনি সৌদি চলে যান। কিন্তু ঠিকমতো ঋণের টাকা দিচ্ছিলেন না। এতে স্ত্রী সুরমা ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। এ নিয়ে প্রায়ই মোবাইলফোনে স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া হত।

সুরমা বেগম বলেন, বুধবার (১ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে শিশু সন্তান মাহিনকে নিয়ে বাবার বাড়ি ভবানীগঞ্জ চরমনসা থেকে বাসে করে পৌর শহরের বাঞ্চানগর এলাকার নিজ ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন।

এ সময় তার স্বামীর সঙ্গে ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে মোবাইলফোনে কথা কাটাকাটি হয়। লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পৌরসভার মজুপুর এলাকায় আধুনিক হাসপাতালের সামনে শিশুটিকে নিয়ে বাস থেকে নেমে যান তিনি। সেখানে ৭০ বছরের ভিক্ষুক সালমা বেগেমের কাছে কোলের সন্তানকে রাখেন। এরপর ভুলে শিশুটিকে নেননি তিনি। বাসায় ফেরার পর সন্ধ্যায় সন্তানের কথা মনে পড়ে তার।

খবর পেয়ে সালমার কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে জেলা পুলিশ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের ভাই বেলালের পরিবারের হেফাজতে রাখে। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিশুটির পরিবারের লোকজন।

সূত্রঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ