কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর গুজব, সতর্ক থাকার পরামর্শ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে গুজব ছড়ানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে আন্দোলনকে অন্য খাতে নিতে চাচ্ছে একটি পক্ষ। এসব গুজব ছড়িয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহতের গুজব ছড়ানো হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে ফেসবুকের বিভিন্ন প্লাটফর্মে গুজব ছড়ানো হয়। তবে রাত সাড়ে ৯টায় শহীদুল্লাহ আবাসিক হলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানানো হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া গুজবপোস্টে দাবি করা হয়, ইব্রাহিম নিরব নামে এক শিক্ষার্থী গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তবে পরে এক ফেসবুক পোস্টে নিরবও জানান তিনি বেঁচে আছেন। তবে গুরুতর আহত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, এমন গুজবের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, ফাঁকা গুলি এবং ককটেল হামলার আওয়াজ আমরা পেয়েছি। তবে কেউ আহত বা নিহত হয়েছেন এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। দেশের কোথাও থেকে এমন তথ্য আমরা পাইনি।
ইব্রাহিম নিরব তার ভিডিও পোস্টে বলেন-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নারকীয় সন্ত্রাসী হামলায় এখনো কেউ নিহত হয়নি। তবে গুরুতর আহত হয়েছে হাজারেরও বেশি। আমরা ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে তাণ্ডব চালায় কুত্তারবাচ্চারা। অনেক কষ্টে আব্বু-আম্মু আমাকে সেফ রেখেছে।
আর আমার নামে যে গুজব ছড়িয়েছে যে, ‘ঢাবি শিক্ষার্থী ইব্রাহীম নিরব মারা গেছে।” আসলে আমি মারা যাইনি বা এখনো পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি, আমি নিউজ পাইনি। এবং আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ এর অর্থনীতি বিভাগে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থী। আন্দোলনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেছি।
তবে আমার অবস্থা এখনো ক্রিটিকাল, বাম পা এবং বাম বাম হাত মচকে গিয়ে শরীরের বামপাশ পুরো অবশ হয়ে আছে। রিপোর্ট নরমাল ছিল, এখন ওষুধের উপর নির্ভরশীল যে কতদিন লাগে ঠিক হতে। তবে আমি আগামীকালই রাজপথে নামবো ইনশাআল্লাহ। হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে বিজয় একাত্তর হলের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে তা পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ক্যাম্পাস ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এবং দোয়েল চত্বর এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে শহীদুল্লাহ আবাসিক হল, দোয়ের চত্বর এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় আবারও সংঘর্ষ ও ধওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
রাতের ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকারীরা জানান, ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় আমাদের ভাই-বোন ও বন্ধুরা আহত হয়েছেন। দুইশ’র বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে আমাদের এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
এদিকে গণমাধ্যমের নামে ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য। গণমাধ্যমের নামে ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহারের ঘটনা দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে দেশের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় চ্যানেলের নাম ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এমনই এক গুজবে ঢাবির রসায়ন বিভাগের এক ছাত্র প্রাণ হারিয়েছেন বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যদিও এমন তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলে বা এর ওয়েবসাইটে কোনো সংবাদ প্রচার হয়নি। দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করেও এমন তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে।
সূত্রঃ নিউজ ২৪