বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন আজ রোববার (৪ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে বণিক বার্তা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে সিরাজগঞ্জ জেলায়।

এ জেলায় ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে ফেনীতে ৮ জন ও লক্ষ্মীপুরে ১১ জন মারা গেছেন। ছয়জন নিহত হয়েছেন ঢাকা ও নরসিংদীতে। পাঁচজন করে মৃত্যু হয়েছে সিলেট, ভোলা ও বগুড়ায়। মাগুরা, মুন্সীগঞ্জ, পাবনা, কিশোরগঞ্জ ও রংপুরে নিহত হয়েছেন চারজন করে। তিনজন করে নিহত হয়েছেন কুমিল্লা ও শেরপুরে। জয়পুরহাট, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার ও বরিশালে নিহত হয়েছে একজন করে।

ঢাকা— আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। এর মধ্যে আবদুল্লাহ সিদ্দিক নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন ধানমণ্ডির জিগাতলা এলাকায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া মো. মিরাজ (২৫) নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি দুজনের নাম এখনো পাওয়া যায়নি।

নরসিংদী— জেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়। নিহত পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন— চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, যুবলীগের দেলোয়ার হোসেন, শ্রমিক লীগের মনিরুজ্জামান ভূইয়া ও আনিছুর রহমান সোহেল এবং মাধবদী পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ড কমিশনার নওশের।

পাবনা— বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান জানান, হাসপাতালে আনার পর দুজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে দুজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন— দোগাছির জাহিদুল ইসলাম ও হাজিরহাটের মাহবুব।

মুন্সিগঞ্জ— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চারজন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষে সাত জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।

রংপুর— সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতার সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন— রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন ধন রায় হারা, তার ভাগ্নে (বডিগার্ড) শ্যামল চন্দ্র রায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী খায়রুল ইসলাম সবুজ (২৮) এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মী খায়রুল ইসলাম সবুজ (২৮) ও মাসুম।

ফেনী— অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে জেলায় আটজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. আসিফ ইকবাল।

মাগুরা— পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ চারজন নিহত হয়েছেন। মেহেদী হাসানের বাড়ি পৌরসভার পারনান্দুয়ালী এলাকায়। আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কোটা সংস্কারের আন্দোলন ১৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে ১৫ জুলাই। এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে পুলিশসহ ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হন তিন শতাধিক। পরের দিন (১৬ জুলাই) ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জনের মৃত্যু হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু সহিংসতার তীব্রতা ও ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। ১৮ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। এ দিন মৃত্যু হয় ২১ জনের। সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটে ১৯ জুলাই। ওই দিন মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। এর মধ্যে রাজধানীতেই প্রাণ হারান ৪৯ জন।

সূত্রঃ বণিক বার্তা