আশাজাগানিয়া ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। যিনি আমাদের কালের বাতিঘর। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে বাঙালির মানসপটে মননে ও সৃজনের আলো জ্বালিয়েছেন।

একাধারে তিনি শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক, উপস্থাপক, সমাজ সংস্কারক ও শিল্পসমালোচক। তার জীবনের উল্লেখযোগ্য কীর্তি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, যা বিগত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশে ‘আলোকিত মানুষ’ গড়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। নিজের কর্মকাণ্ডে উন্নীত হয়েছেন শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতির বাতিঘর হিসেবে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) মঙ্গলবার অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৫তম জন্মদিন। ১৯৩৯ সালের এই দিনে কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তার পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার কামারগাতি গ্রামে। তার বাবা আযীম উদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন কলেজ শিক্ষক। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে বাংলায় স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন তিনি।

পরবর্তীতে কিছুকাল সিলেট মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালের ১ এপ্রিল তিনি রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে সরকারি চাকুরিজীবন শুরু করেন। সেখানে পাঁচ মাস শিক্ষকতা করার পর তিনি ঢাকায় ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে যোগ দেন (বর্তমানে সরকারী বিজ্ঞান কলেজ)। এই কলেজে তিনি দুই বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বাংলা পড়াতেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে সেখানে যোগদান করেন। আবু সায়ীদ যখন ঢাকা কলেজে যোগ দেন তখন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান।

ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ছিলেন তার নেতৃত্বে। সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বেগবান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। এ সময় কিছুকাল বাংলাদেশে টেলিভিশনে উপস্থাপনাও করেন। ১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

দেশের সার্বিক অবক্ষয় এবং সম্ভাবনাহীনতার ভেতর সীমিত সংখ্যায় হলেও যাতে শিক্ষিত ও উচ্চমূল্যবোধসম্পন্ন আত্মোৎসর্গিত এবং পরিপূর্ণ মানুষ বিকশিত হওয়ার পরিবেশ উপহার দেয়া যায় সেই লক্ষ্যেই তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে পাঠাগারের অপ্রতুলতা অনুধাবন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ১৯৯৮ সালে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু হয়। ৭০ এর দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবেও তিনি খ্যাতি লাভ করেন।

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৪ সালে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৫ সালে শিক্ষায় একুশে পদক, প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৭ সালে বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন থেকে পালমোকন-১৭ সম্মাননা অর্জন করেন।

সূত্রঃ ভোরের কাগজ