Home জুলাই জাগরণ সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চ প্রস্তুত, আড়ালে সমঝোতার তৎপরতা -বিএনপি দেবে সই

সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চ প্রস্তুত, আড়ালে সমঝোতার তৎপরতা -বিএনপি দেবে সই

জাতীয় জুলাই সনদে আজ শুক্রবার হবে বহুল প্রত্যাশিত স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। যদিও বাস্তবায়ন পদ্ধতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবুও বিএনপি জানিয়েছে সই করবে। শেষ মুহূর্তে জামায়াত ও এনসিপিকে রাজি করাতে চলছে সমঝোতার প্রচেষ্টা।

68
0
সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চ প্রস্তুত,
ছবি: সমকাল

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ‘জুলাই সনদে’ আজ শুক্রবার স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবুও এতে স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছে বিএনপি।

ঐকমত্য কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি– এই দুই দলকে সনদের সম্ভাব্য বাস্তবায়ন পদ্ধতি অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, যাতে তারা স্বাক্ষরে রাজি হয়। তবে দুটি দলই সনদ স্বাক্ষরের আগে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত এই দাবিকে কেন্দ্র করে চলেছে সমঝোতার দৌড়ঝাঁপ

জামায়াতের অবস্থান: গণভোটে অনড়, তবু অনুষ্ঠানে যাবে

জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, তারা নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে অনড়। তবে রাজনৈতিক সংস্কারের স্বার্থে এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে।
তবে সই করবে কিনা, সেটি আজ (শুক্রবার) আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এনসিপির শর্ত ও মতপার্থক্য

এনসিপি জানিয়েছে, তারা বাস্তবায়ন পদ্ধতির খসড়া, নির্বাচনের আগে গণভোটের নিশ্চয়তা, সনদের আইনি ভিত্তি এবং পরবর্তী সংসদকে কনস্টিটুয়েন্ট ক্ষমতা না দিলে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবে না।
তবে মধ্যরাতের বৈঠকে তাদের অবস্থান কিছুটা নমনীয় হয়েছে, এমনটাই দাবি করেছে ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র।

রাত ১টা ৪৫ মিনিটে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সাংবাদিকদের বলেন,

“এনসিপি আজকের অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না। তবে ভবিষ্যতে সুযোগ থাকলে সংস্কার কার্যক্রমে যুক্ত হব।”

সনদে ত্রুটি সংশোধন, সপ্তম তপশিল নিয়ে বিভ্রান্তি

শেষ সময়ে সনদের ত্রুটি সংশোধনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তপশিল বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল, কিন্তু কমিশনের বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানিয়েছেন—“সপ্তম তপশিল বাদ যাবে না; এটি ভুলবশত যুক্ত হয়েছিল।”

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার হাতে আমন্ত্রণপত্র

বৃহস্পতিবার রাতে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার ও মনির হায়দার এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

পরে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বাসায় আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়।

রাতভর সমঝোতার চেষ্টা

কমিশন সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে, তারা সনদে সই করতে রাজি। এনসিপিকেও সরকারপক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা চলে।
তবে শেষ মুহূর্তে এনসিপি অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয়।

অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো গণভোটের দাবিসহ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সম্মত হয়েছে।

বাস্তবায়ন পদ্ধতি গোপন রাখছে কমিশন

কমিশন জানিয়েছে, সইয়ের আগে বাস্তবায়ন পদ্ধতির খসড়া প্রকাশ করা হবে না, কারণ এতে অন্য দলগুলো সরে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শ অনুযায়ী, সনদ কার্যকর হবে সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে, যার অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

পরবর্তী সংসদের প্রথম অধিবেশন হবে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’, যেখানে এই সংস্কার অনুমোদিত হবে।

বিএনপি ও অন্যান্য দলের নোট অব ডিসেন্ট

জুলাই সনদে মোট ৮৪টি সংস্কার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি বিষয়ে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
জামায়াত বলেছে, যদি সনদ গণভোটে অনুমোদিত হয়, তবে তা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
অন্যদিকে এনসিপি চায়, নোট অব ডিসেন্ট বাদ দেওয়া হোক

বিএনপি এই অবস্থানে অনড়—যেসব বিষয়ে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তা বাস্তবায়ন করবে না

এ মাসেই বাস্তবায়নের সুপারিশ

ঐকমত্য কমিশনের অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকারকে সনদ বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, “যেসব দল শুক্রবার সই করবে না, তারা পরবর্তী সময়েও যোগ দিতে পারবে।”

বৃহস্পতিবার এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, “নোট অব ডিসেন্টসহ ৮৪ সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে সনদে স্বাক্ষর হবে।”

প্রস্তুতি ও আয়োজন

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইতোমধ্যে বিশাল মঞ্চ তৈরি হয়েছে। প্রায় তিন হাজার অতিথি উপস্থিত থাকবেন। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র—‘সনদ কীভাবে বদলে দেবে দেশের রাজনীতি’।

এনসিপির সংবাদ সম্মেলন ও হুঁশিয়ারি

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামটরে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাস্তবায়ন আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া এই স্বাক্ষর অর্থহীন। জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গণভোটের সিদ্ধান্ত না জানালে আমরা স্বাক্ষর করব না।”

তিনি আরও বলেন, “সনদের ৮৪ সংস্কার নিয়ে গণভোটের আয়োজন করতে হবে, যা হবে নতুন সংবিধান সংস্কারের ভিত্তি—‘বাংলাদেশ সংবিধান ২০২৬’।”

চার বাম দল সই করবে না

সংবিধানের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ায় সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছে চার বাম দল—

  • বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
  • বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
  • বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)
  • বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ)

বৃহস্পতিবার পল্টনের মুক্তি ভবনে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা সাতটি কারণ উল্লেখ করে সনদ বর্জনের ঘোষণা দেয়