সন্তান জন্মের সময় প্রসূতি মায়েদের ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয় ‘জি-পেথিডিন’ নামের একটি ইনজেকশন। অত্যন্ত সংবেদনশীল এ ওষুধ অস্ত্রোপচারের সময় বা অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ৭-৮ বছর ধরে নকল করে বাজারজাত করে আসছিল একটি চক্র।

প্রচলিত ‘জি-ডায়াজিপাম’ ঘুমের ইনজেকশনকে ঘরোয়াভাবে রূপান্তর করে চেতনানাশক ‘জি-পেথিডিন’ হিসেবে চালানো হতো। অথচ ‘জি-পেথিডিন’ তৈরির জন্য শুধু অনুমোদন রয়েছে দেশীয় একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের।

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম মতিঝিল, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন– মো. আলমগীর খান, মো. মাসুদ রানা ও মো. আহ্সান হাবীব শাওন।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২০০টি জি-পেথিডিন, ২২০টি জি-পেথিডিনের অ্যাম্পুল, ১ হাজার ১০টি জি-ডায়াজিপামের অ্যাম্পুল, ৫২০টি জি-পেথিডিনের ফাঁকা বক্স, ২০০টি জি-পেথিডিন স্টিকার, দুটি (১২ কেজি) জি-পেথিডিন ফয়েল পেপার, ১ হাজার ৫০০টি জি-পেথিডিন ব্যবহারবিধি, একটি জি-পেথিডিনের ফয়েল লাগানোর লোহার চাপ মেশিন, পাঁচ কেজি অ্যাসিড, পাঁচটি কাঠ ও প্লাস্টিক দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি স্কিন প্রিন্ট করার ফ্রেম, ২৫০টি জি-পেথিডিন রাখার প্লাস্টিকের ট্রে জব্দ করা হয়েছে।

গোয়েন্দা প্রধান হারুন-অর-রশীদ বলেন, “জি-ডায়াজিপাম’ ঘুমের ইনজেকশনকে চেতনানাশক ‘জি-পেথিডিন’ হিসেবে রূপান্তরিত করে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাজারজাত করে আসছিল। তারা মিটফোর্ড এলাকা থেকে প্রতিটি ‘জি-ডায়াজিপাম’ আট টাকা দিয়ে সংগ্রহ করে আসছিলেন। কেনার পর ইনজেকশন অ্যাম্পুলকে অ্যাসিড দিয়ে ভিজিয়ে রেখে সেটির ওপরে থাকা লেখা তুলে ফেলা হয়। সেটিতে কাঠ ও প্লাস্টিক দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি স্কিন প্রিন্ট করার ফ্রেম দিয়ে ‘জি-পেথিডিন’ ইনজেকশন নামকরণ করা হয়।

এই অ্যাম্পুল প্লাস্টিকের ট্রেতে পাঁচটি করে সাজিয়ে হাতে চালানো চাপ মেশিন দিয়ে ‘জি-পেথিডিন’ ব্যথানাশক ফয়েল পেপার সংযুক্ত করা হয়। পরে এসব নকল ‘জি-পেথিডিন’ প্রতিটি ৬০০ টাকায় বাজারজাত করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘রাজধানীর অনেক হাসপাতালের নিচে বিভিন্ন ফার্মেসিতে এসব ওষুধ ব্যবহার বিক্রি হয়। চক্রের সঙ্গে বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের নিচের ফার্মাসিস্টের যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছি, তাকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত করে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্রঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ