বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ সাইকেল চালাতে ভালোবাসে। তাই অনেকে ইন্টারনেটে সাইকেল চালানোর উপকারিতা  জানতে চেয়ে অনুসন্ধান করে। তাই আজকের এই পোষ্টে সাইকেল চালানোর উপকারীতা বিস্তারীত দেয়া হলো।

সাইকেল চালানোর উপকারিতা

১। নিয়মিত সাইকেল চালালে ওজন কমে। সাইকেল চালালে ক্যালোরি খরচ বৃদ্ধি পায় এবং মেটাবলিজম বা বিপাকের হার বৃদ্ধি করে, যার ফলে ওজন কমতে সাহায্য করে।

২। সাইকেল চালালে হাইপারটেনশনের রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৩। সাইকেল চালালে বিশ্রামকালীন হৃদস্পন্দন কমায়। উচ্চ বিশ্রামের হৃদস্পন্দন কারডিওভাস্কুলার রোগীদের মৃত্যুহার বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত।

৪। সাইকেল চালালে HDL বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে LDL বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৫। নিয়মিত সাইকেল চালালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যা মালয়েশিয়ার প্রধান ৩টি রোগের একটি। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ২০ মাইল সাইকেল চালায় তাদের মারাত্মক ও মারাত্মক নয় এমন হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে যায়।

Saobaan cycle

৬। সাইকেল চালানো স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্ট্যাটিক সাইকেল চালনার ব্যায়াম নিয়মিত করলে হার্ট ফেইলিউরের রোগীদের কার্ডিয়াক ফাংশন উন্নত হয় (Lancet 1990).

৭। ডায়াবেটিস কমায়, গবেষণায় পাওয়া গেছে, ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস মেলাইটিসের হার কমে। যাদের ডায়াবেটিস মেলাইটিস আছে তারা নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করে এবং টাইপ ২ ডাইয়াবেটিস মেলাইটিস এর সূত্রপাতকে প্রতিহত করে।

৮। মাংসপেশির গঠনে চমৎকার কাজ করে সাইক্লিং। বিশেষ করে শরীরের নীচের অংশের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে সাইক্লিং।

 

৯। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।

১০। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় সাইকেল চালানো।

১১। ডিপ্রেশন, স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি কমায় নিয়মিত সাইক্লিং।

১২। মহিলাদের কোলেসিস্টেকটেমির (অপারেশনের মাধ্যমে পিত্তথলির অপসারণ)হার কমায়।

১৩। সমন্বয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করে সাইকেল চালানো।

১৪। শ্বাস যন্ত্রের পেশীকে ট্রেইন করে সাইক্লিং।

 

সাইকেল চালালে কি ওজন কমে?

আপনি কতটা সময় প্যাডাল করছেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক ঘণ্টা সাইক্লিং করলে ৫০০ ক্যালোরি পর্যন্ত বার্ন করা যায়। তাই নিয়মিত সাইকেল চালালে এবং স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া করলে সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন ঝরানো সম্ভব।

মেয়েদের সাইকেল চালালে কি হয়?

মেয়েদের সাইকেল চালালে হরমোনাল কোন ক্ষতি হয় না, বা খারাপ কোন প্রভাব পড়ে না। অনেকের ক্ষেত্রে হাইমেন বা সতিচ্ছেদ পর্দা ছিড়ে যেতে পারে , তবে এটা এমনিতে বা অন্য কারণেও ছিড়ে যেতে পারে। সাধারণভাবে সাইকেল চালানো শরীরের জন্য ভাল।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রেজার ভ্যালি থেকে কয়েকজন গবেষক এক হয়ে একটি পরীক্ষা করেন। কয়েকজন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবী তাদের ল্যাবে এসে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। স্থির বাইসাইকেলে বসে আধা ঘন্টা সাইকেল চালাতে বলা হয় তাদেরকে। এ সময়ে তাদের মুখে লাগানো মাস্কে বিশুদ্ধ অথবা ডিজেল-পোড়া বায়ু সরবরাহ করা হয়। এই বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া অবস্থায় তাদের অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ, হৃদস্পন্দনের গতি এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থার তথ্য নেওয়া হয়।

গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বেশ অদ্ভুত। ধীর গতিতে সাইকেল চালানো অবস্থায় শরীরে বেশ খারাপ প্রভাব ফেলে ডিজেল-পোড়া ধোঁয়া। কিন্তু যখন সেই ব্যক্তি জোরসে সাইকেল চালাচ্ছেন, তখন শরীরের ওপর বিশুদ্ধ বায়ু আর দূষিত বায়ুর প্রভাব প্রায় কাছাকাছি।

গবেষণার সাথে জড়িত ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার মিশেল কোয়েল বেশ অবাক হন এই ফলাফল দেখে। কারণ তারা এর ঠিক উল্টোটা হবে আশা করেছিলেন। কারণ জোরে সাইকেল চালানোর সময়ে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। আবার অনেক সময়ে মানুষ নাকের বদলে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নেয়। এতে শরীরে বেশি পরিমাণে দূষণ ঢোকার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। ফলাফল হয়েছে একেবারেই বিপরীত। “আমরা যা ফল পেয়েছি তাতে বোঝা যায়, বেশি দূষণের মাঝে ধীরে সাইকেল চালানো যাবে না”, বলেন কোয়েল।

সাইকেল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি তেমনি পরিবেশের জন্যও উপকারি। অনেকেই শুধুমাত্র আনন্দের জন্য সাইকেল চালান। এর উপকারিতাগুলো জানার পর আপনার উৎসাহ নিশ্চয়ই আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন।