‘বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা/অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা/এত শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি/আলমারি প্রথম তাকে সে রাখলো সব নীল শাড়ি/হালকা নীল একটা কে জরিয়ে ধরে বল্লো, তুই আমার আকাশ/ দ্বিতীয় তাকে রাখলো সব গোলাপি শাড়ি।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি শামসুর রহমানের কবিতায় উঠে এসেছে শাড়ি নিয়ে মুগ্ধকর বাক্য। মেয়েদের শাড়ি পোশাকটাই আসলেই বৈচিত্র্যময়। অন্য পোশাক বাদে একটা মেয়েকে শাড়ি পড়লে অন্য পোশাকের তুলনায় বেশি সুন্দর লাগে।
বাঙালী নারীর সঙ্গে শাড়ি শব্দটি যেন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বাঙালি নারী বলতেই একজন শাড়ি পরিহিতাকে আমরা মনের চোখে ধারণ করি।সময়ের প্রেক্ষাপটে বাঙালি নারীর বসনে এসেছে নানা সাজ, বিভিন্ন রূপ। তবু শাড়িতেই যেনো সবচেয়ে সুন্দর বাঙালি নারী।
‘শাড়ি’ শব্দটি উচ্চারণ মাত্রই বাঙালি রমণীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যে কোনো উৎসবে শাড়ি ছাড়া নারীর সাজগোজ যেন অপূর্ণই থেকে যায়। বাঙালি নারীর জীবনে শাড়ি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। পাশ্চাত্যের ছোঁয়া থাকলেও এদেশি নারীদের পছন্দের তালিকায় এখনো শীর্ষে রয়েছে শাড়িই। তাই ঈদের মতো বর্ণিল ও আনন্দময় উৎসব নারীরা নতুন শাড়ি ছাড়া কল্পনাই করতে পারেন না। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবার ঈদেও নারীদের টান শাড়ির দিকে বেশি বলেই মনে করছেন বিক্রেতারা।
অনেক স্বামী হয়ত নিজের বউকে কবে শাড়ি পরা কবে দেখেছে ভুলে গেছে। এরকম বছর এক দুয়েক আগে এক ঈদে প্রেম করে বিয়ে করা বউয়ের পছন্দ ও চাহিদামত সকল ফরমায়েশ পূরণ করে, স্বামী তার পছন্দে বউয়ের জন্য কিনে এনেছিল নীল শাড়ি। প্রেমিক স্বামী ঈদের নামাজ পরে বাড়ী এসে আশা করেছিল প্রেয়সী পরবে শাড়ি কিছুটা আশাহত হয়ে ভেবেছিল দুপুরে যাব যখন শ্বশুর বাড়ি তখন নিশ্চয় বউ পরবে নীল শাড়ি।
কিন্তু অভ্যাসগত কারণে ও শাড়ি সাজে নারী হতে মেয়েদের একটু সময়ও লাগে তাই তখনও শাড়ি পরেনি প্রেয়সী বউ। বউকে শাড়ি পরা এতটাই মর্মাহত হয়েছিল যে, তাৎক্ষনিক কিছু বলতেও ঈদের বউকে দেওয়া নীল শাড়ী যেন নীল কষ্ট হয়ে বিকে বিঁধেছিল দম বন্ধ হওয়া বেদনা কষ্ট নিয়ে বউকে তার বাপের বাড়ি গেটে নামিয়ে দিয়ে বলেছিল, প্রেমিক স্বামী তার প্রেয়সী বউকে “আমি যাবনা শ্বশুর বাড়ি, আর তোমার সঙ্গে আমার আড়ি! কেন আজ পরনি তুমি শাড়ি।
বাংলাদেশে শাড়ি শিল্প বেশ পুরান এবং প্রসিদ্ধ। যুগের সঙ্গে শাড়ির রঙচঙ আর উপাদানেও ঘটেছে বিশেষ পরিবর্তন। প্রস্তুতকরণে আলাদা হিসেব। নকশায়, ডিজাইনে। অনেক আগে আমাদের মসলিন শাড়ি দারুণ প্রভাব করেছিলো। অবাক করেছিলো বিশ্বকে। একটা সময় মসলিন শাড়ির চল উঠে গেছে। আমাদের মধ্যে এখন জামদানি-প্রীতি কাজ করে।
ভারতীয় অঞ্চলের নারীদের পোশাক বলতে প্রথম স্থানটি দখল করে রেখেছে শাড়ি। হয়তোবা অঞ্চল ভেদে শাড়ি পরার ক্ষেত্রে নানা ধরনের স্টাইল রয়েছে। তবে ১২ হাত শাড়ি সামলাতে নারীরা অল্প অল্প করে শিখতে থাকে শৈশব থেকে। পুতুল খেলার ছলে শাড়ি পরে যে বাঙালি মেয়েটি বড় হয়; সে একদিন লাল বেনারসি পরে পা রাখে সংসার জীবনে। তাই নারী ও শাড়িকে আলাদা করে কল্পনা করা যায় না বাঙালি নারীদের ক্ষেত্রে।
হাল ফ্যাশনে নারীরা পাশ্চাত্যের ডিজাইনের দিকে ঝুঁকে থাকলেও বিয়ে বা নানা উৎসবে তারা শাড়িতে নিজেকে সাজাতে ভালোবাসে। তবে ব্যস্ত জীবনের বাহানাতে শাড়ি পরার চেয়ে সালোয়ার কামিজ বা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়।
৯০ দশকের আগেও এদেশের নারীরা বিয়ের পর সালোয়ার কামিজ বা অন্য কোন পোশাক পরবে তেমনটা চিন্তা করতে পারত না। তার ও আগের সময়ের দিকে দেখা গেছে খুব অল্প বয়সেই নারীরা শাড়ি পরত। যার প্রমাণ মিলে কাব্য সাহিত্যে। সে সময়কার সমাজের নারীদের ফ্রক ছেড়েই শাড়ি পরার রীতি ছিল।
বাঙালি নারী আর শাড়িকে যেমন আলাদা করে দেখা যায় না। তেমনি বিশাল এ শাড়ি কোন গড়নের নারীকে ভালো লাগবে কি লাগবে না তা চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র।













