আফরিন জাবীন মুন এর ছোট গল্প- রঙ্গিন স্বপ্ন গুলো

মেয়েটা ভাবে ছেলেটার ২য় একটা মোবাইল আছে। ছেলেটা মেয়েটার নেট অফ পেলে ভাবে মেয়েটার ২য় মোবাইল আছে।

মলিস একদিন রাগ করে মনিজা কে বলে কার সাথে এতোটা সময় পার করো।নেট অফ থাকে কেনো কিছু তো বুঝতে পারছি না। আল্লাহই জানে তুমি কার সাথে এনগেইজ।মনিজার চোখে পানি।

তুমি আমাকে সন্দেহ করো? ভালবাসার এই পুরষ্কার পেলাম।মলিস আলত করে হাত ধরে বলে সরি।ভুল হয়েছে।

মনিজা ভাবে মলিস এখন আর তাকে ভালবাসে না আগের মতো। দূরে সরে গিয়েছে।সময় কম দেয়। খালি ব্যস্ততার বাহানা দেয় মলিস।কার সাথে রিলেশন এখন মলিসের?কেনো সে এতো অবহেলা করছে মনিজা কে? আগে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলত। এখন ৩/৪ মিনিট কথা বলেই হাপিয়ে যায় মলিস।খালি ফোন রেখে দেওয়ার বাহানা। একবার মনিজা রাগ করে দুই ঘন্টা ফোন বন্ধ রেখে দেয় এই দুই ঘন্টা মলিস পাগল হয়ে গিয়েছিল। যখন মোবাইল অন করল সাথে সাথে মলিসের ফোন।সে কি কান্না মলিসের বাচ্চাদের মতো। এই দুই ঘন্টায় মলিস মনিজাকে ৫০ বার কল করে।মিস কল এলার্টে উঠে আসে।সেই মলিস এখন ১/২ মিনিট কথা বললেই সন্তুষ্ট। কিন্তু মনিজা সন্তুষ্ট হতে পারে না। সে আগের মতোই মলিস কে চায়।মলিস আগের মতোই ওকে ভালবাসুক।পাগলামি করুক।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মলিস দেখে ৫ঘন্টা আগে মনিজা এক্টিভ ছিল।মনিজা নেটে থাকলেই মলিসের মনে সন্দেহ হয়। কি করছে মনিজা নেটে? কারও সাথে বন্ধুত্ব হলো না তো? এতো রাতে কেনো থাকবে সে নেটে। যেখানে আমি নেই সেখানে মনিজা কি করছিল? কার সাথে তার প্রেম?সন্দেহের টানাপোড়নে ফোন দেয় মলিস মনিজা কে।

মনিজা হ্যালো বলতেই মলিস বলে “কি ব্যাপার এতো রাতে কেনো নেটে ছিলা?না ঘুমিয়ে কি করছিলা?কার সাথে ছিলা?যেখানে আমি নেটে নেই তোমার কি কাজ নেটে?উত্তর দাও”। মনিজা ঘুম আসছিল না তাই নেটে ঢুকেছিলাম।আচ্ছা সরি ভুল হয়েছে আর ঢুকবো না।মলিস না ঢুকবা না কেনো একশবার ঢুকবা।নতুন নতুন বন্ধুরা না হয় মন খারাপ করবে।অবশ্যই ঢুকবা।ওদের কমেন্ট করবা।তোমার কমেন্ট না পেলে ওরা মন খারাপ করবে।তুমি হচ্ছ বিখ্যাত দানবির বন্ধু সবার লাইক কমেন্টের। আমি কে?? এখন তো আমাকে পাত্তা দাওনা।। বল এখন ক’টা বাজে?দিন সারে এগারোটা। আমি কত গুলো মেসেজ দিয়েছি তোমাকে? একটাও সিন করনি।কেনো সিন করবা তোমার তো সময় নেই?প্লিজ মলিস রাগ করিও না। আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম।তাই সিন করিনি। ঘুমাবা তো সারাদিন।সারা রাত থাকবা ফেবুতে সারাদিন না ঘুমালে হবে কি করে? মলিস আমি মাফ চাই ভুল করেছি।আর জীবনেও এই ভুল হবে না। প্লিজ শান্ত হও।মলিস আজ বিকেলের প্রগ্রামে যাওয়ার সময় কি আমি নিতে আসবো?মনিজা রাগ করে “না আমি চলে যেতে পারবো।তোমাকে কষ্ট করে আসতে হবে না।” ঠাস করে মলিস ফোনটা কেটে দেয়। খুব কান্না করছে মলিস।মিনিজা কেনো বলল ও একা যাবে?সে আমাকে ভালবাসে না কেনো? মনিজার চোখে পানি। মলিস কেনো এতো বাজে ব্যবহার করলো আমার সাথে।ও আমাকে নিতে আসবে এইটা জিজ্ঞেস করার কি আছে?তার মানে সে চাচ্ছেনা আর রিলেশন টা রাখতে।আমি কি এমন করেছি যে সে আমার সাথে এতো বাজে ব্যবহার করলো।

বিকেলে মনিজা বন্ধুদের প্রাগ্রামে একা হাজির।সবাই এক সাথে আছে ১৫জনের এক গ্রুপ।কিন্তু মলিস মনিজার সাথে কোন কথা বলছে না।দূরে দূরে।মনিজার চোখে পানি।প্রগ্রাম শেষ হতে হতে রাত ৮টা। মনিজা ওদের এক বন্ধু সুমন কে বলে মলিস জিজ্ঞেস করতো আমাকে বাসায় নামিয়ে দিবে নাকি?সুমন মলিস কে জিজ্ঞেস করতেই ও বলল নামিয়ে দিবো। সি এন জি তে মনিজা বলে “কি হয়েছে এতো রেগে আছ কেনো?কি করেছি আমি?”মলিস খুব বাজে ব্যবহার করে মনিজার সাথে।মনিজার চোখের পানি গুলো ও দেখেনি।দেখতে পেয়েও দেখেনি।

ভোরে ফোনের শব্দে মনিজার ঘুম ভেংগে যায়। ফোন নিয়ে দেখে মলিসের ফোন। মনিজা ভেজা কন্ঠে হ্যালো বলতেই মলিসের কান্না ভেজা কন্ঠ।মনিজা আই লাভ ইউ।আমি সরি।আসলে কাল আমার মাথা ঠিক ছিল না।যখন তুমি বললা তুমি একা চলে যাবা আমাকে আসতে হবে না তখনি মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।কেনো তুমি বললা না আমাকে, তোমাকে নিতে আসতে।সরি কাল রাতে গাড়িতে আমি তোমার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করেছি।তুমি রেডি থাকবা আমি বিকেলে আসবো তোমাকে নিয়ে নদীর পাড়ে যাবো।বাসায় ম্যানেজ করে রাখো। নিমিষেই সব রাগ অভিমান শেষ।

মনিজার ছুটি শেষ সে চলে যাবে হোস্টেলে।৪দিন বাকি আছে।এর মধ্যে মলিসের সাথে হয় খুব ঝগড়া।ঝগড়া করে মনিজা পরের দিনি হোস্টেলে চলে যাওয়ার জন্য রাজশাহীর বাসে উঠে। বাস ছাড়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে মলিসের ফোন।তুমি কোথায়?আমি বাসে। বাসে মানে?? বাসে আমি রাজশাহী চলে যাচ্ছি।কি বলছ তুমি?আমাকে না বলে না দেখা করে তো তুমি রাজশাহী যেতে পারো না।। এখনি বাস থেকে নামো। এখনি।।বাস যে জায়গায় আছে ওখানেই নামো।আমি আসছি। মলিস তুমি কি পাগল হয়েছ?এটা অসম্ভব।।

মলিস কান্না করতে করতে বলে “তুমি যদি বাস থেকে না নামো তাহলে তুমি রাজশাহী পৌছার আগেই আমার জানাজা হবে।” মনিজা ভাইয়া বাস থামান আমি নামবো।। কন্ডাকটার আপা এখানেই নামবেন।হ্যাঁ এখানেই নামবো।

মনিজা বাস থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে ১০ মিনিটের মধ্যে মলিস ও সুমন পরের বাসের টিকিট নিয়ে এসে হাজির।মলিস “মিনিজা তোমার এতো বড় সাহস আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাচ্ছ?”মনিজা তুমি আমার সাথে এতো বাজে ব্যবহার করলে আমি কি করতে পারি?মলিস আমার শুধু বাজে ব্যবহার টাই দেখলা ভালবাসাটা দেখলা না।

সুমন বলে “এবার তোদের এই নাটক বন্ধ কর।বাস আসছে তাড়াতাড়ি উঠ।”তিন বন্ধু পরের বাসে উঠে চলে যায়।মলিসা কে হস্টেলে নামিয়ে দিয়েই পরের বাসে আবার ফিরে আসে দুই প্রিয় বন্ধ।

লেখা-আফরিন জাবীন মুন