নারীরা হ্যাট বা টুপি পরতে অপছন্দ করেন এমন হয়তো পাওয়া যাবে না। ফ্যাশন্যাবল আধুনিক ডিজাইনের নানা ধরনের হ্যাট রয়েছে যা নারীদের বিভিন্ন ড্রেসের সাথে মিল রেখে পরলে অত্যন্ত সুরুচিবান ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিবে।
ফ্যাশন অনুষঙ্গের ভেতরে উল্লেখযোগ্য একটি নাম ক্যাপ, হ্যাট বা টুপি । নিজের রুচিশীলতার পরিচয় বলুন কিংবা গরমের হাত থেকে মুক্তি, যে কোনো সময়ের জন্যই এই হ্যাট বা টুপি আপনার সঙ্গী। রোদের মধ্যে বা আপনি যদি কোনো ভ্রমনের যান তখন আবশ্যিকভাবে এই টুপি গুলো পরতে পারেন। একদিকে যেমন গরমের উষ্ণতা থেকে রেহাই পাবেন অন্যদিকে আপনাকে দেখতেও অনেক আকর্ষণীয় লাগবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে টুপি ছিল অভিজাতদের প্রতীক। তখন সাধারণ মানুষ এবং ধনীদের টুপির ভেদাভেদ ছিল। সব থেকে নিম্ন শ্রেণির মানুষজন পরত বেসবল ক্যাপ। এখন সেই ক্যাপই ফ্যাশন হয়ে উঠেছে। বেসবল ক্যাপ শুধু খেলোয়াড়দের নয়, এখন বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ এই ক্যাপ। সাড়া বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বেসবল ক্যাপ বিক্রি হয়। অনেক নারী অবশ্য পছন্দমতো হালকা-পাতলা কালারফুল হ্যাট পরছেন।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের ক্যাপের ভিন্নতা রয়েছে। ব্র্যান্ডের ক্যাপের মধ্যে বেইলি হ্যাটম, জ্যাকসন, বারশাহ, স্কালা, অ্যাডিডাস, রিবক, কলাম্বিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে ঢাকার বাজারে ক্যাপের মধ্যে বেগি ক্যাপের চাহিদা বেশি। আগে শুধু ছেলেরা ক্যাপ পরলেও এখন মেয়েরাও ফ্যাশন ও গরমের কথা মাথায় রেখে ক্যাপের দিকে ঝুঁকছে।
ফ্যাশনসচেতন যে কোনো মেয়েই পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন পছন্দের ডিজাইন ও রঙের ক্যাপ। আর ক্যাপ পাওয়া যাবে হাতের কাছের যে কোনো মার্কেটেই। পছন্দের যে কোনো ব্র্যান্ডের ক্যাপ আপনি পরতে পারেন রুচিশীল পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে। তবে খেয়াল রাখবেন, এই গরমে সিনথেটিক ফেব্রিক্সের চেয়ে কুল ম্যাক ফেব্রিক্স ও গ্যাবার্ডিন কাপড়ের হ্যাট ও ক্যাপ বেশি উপযোগী। আর তাই ফ্যাশনের পাশাপাশি দরদাম ও কাপড়ের বিষয় খেয়াল রেখে আপনার প্রিয় ক্যাপটি পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনে নিন আজই।
আবার ভ্রমণ যাদের শখ, তাদের কালেকশনে টুপি থাকবেই। সমুদ্র হোক বা পাহাড়, মাথাটিকে কড়া রোদ থেকে বাঁচাতে টুপি অপরিহার্য। আবার লুকেও আনে পরিবর্তন। তাই সময় বদলালেও টুপি কিন্তু ফ্যাশনে তার ধারাবাহিক জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছে। এক্ষেত্রে ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে মুখের গড়ন অনুযায়ী টুপি নির্বাচন করতে হয়।
মুখের গড়ন অনুযায়ী টুপি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার জেনে নিন কিছু পরামর্শ-
গোলাকার মুখ
গোল মুখ লম্বা ও চওড়ায় সমান হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে টুপির ধার চওড়া হবে এমন টুপি বাছাই করুন। মাঝের অংশ যা মাথা জড়িয়ে রাখে সে অংশ হাই ক্রাউনড বা একটু উঁচু হবে। এতে মুখের গোলভাব কমে দেখতে ভাল লাগবে। গোল মুখে পানামা হ্যাট স্টাইল মানাবে।
ডিম্বাকৃতির মুখ
যে কোনো শেপের টুপি ডিম্বাকৃতির মুখে ভাল লাগে। তবে নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ফেন্সি চওড়া ধারের টুপি পরতে পারেন। বাকেট স্টাইলের টুপি ভাল লাগবে।
লম্বা মুখ
লম্বা মুখাকৃতিতে মুখ লম্বায় বড় ও চোড়ায় বেশ ছোট হয়ে থাকে। এই মুখের আকৃতিতে চওড়া ধারের টুপি একদমই মানায় না। বদলে ছোট ধার ও ক্রাউনের টুপি মানাবে। কাউবয় হ্যাট স্টাইল ভাল লাগবে।
বর্গাকৃতি মুখ
চারকোনা মুখের গড়ন দেখলেই বর্গাকৃতি মুখাকৃতি বোঝা যায়। এক্ষেত্রে একটু বাঁকা টুপি ভাল লাগবে। চাইলে ফ্লপি ও চওড়া ধারের টুপিও পরতে পারেন।
হার্ট মুখ
এ ধরণের মুখে থুতনি কোনাকুনি হয়ে থাকে। তাই আকারে মাঝামাঝি ধারের টুপি এই মুখে ভাল মানাবে। এছাড়া পশমি টুপিও মানানসই।
এটি কীভাবে স্টাইল করবেন
কেমন স্টাইল করবেন, কেমন দেখাবে, কি ধরনের স্যান্ডেল পরবেন এগুলো একজন নারীর রীতিমত ভাবনাতে থাকে সবসময়।
এই ক্যাপ বা টুপিটি ঝকঝকে গুচি সুইমসুট এবং গোল্ডেন কালার স্যান্ডেল এর সাথে একটি ঝলকানো সান টুপি পরতে পারেন।
আপনি কালো নাকি ফর্সা এগুলো ভেবে আপনাকে এই টুপিতে মানাবে কিনা ভাববেন না। যেকোনো বর্ণের মানুষের জন্য এই টুপি গুলো দারুন মানায়।
প্রসঙ্গত, ১৫৭০ সালে ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথ বিশেষ অনুষ্ঠানে টুপি বা হ্যাট পরা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছর এই কঠিন নিয়ম মেনে চলতে হয়েছিল সকলকে। সেই নিয়ম-নীতি ভেঙে গেলেও এখন সারা বিশ্বে টুপির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে একসময় টুপি পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
১৭৭৫ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য টুপি পরা নিষিদ্ধ ছিল। ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর চীনে এক ধরনের ক্যাপ পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯২৮ সালে তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্ক নিজ দেশের অধিবাসীদের ফেজ টুপি পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হাইস্কুলে যে কোনো ধরনের ক্যাপ পরা ছিল নিষিদ্ধ।
Aninda, Sub-Editor