কথা ছিল অনুষ্ঠান করে মেয়েকে পাঠাবেন শ্বশুরবাড়ি তার জন্য দিনরাত শরবত বিক্রি করে একটু একটু করে ৫ বছর ধরে টাকা জমিয়েছেন আবদুল কুদ্দুস। তবে সেই স্বপ্নে আজ প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠা।

তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে আমার টাকাটা দেয়ার কথা ছিল। সেই হিসেবে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিই। কিন্তু আমার টাকাটা এ পর্যন্ত দেয়নি। অফিসে এলে শুধু আজ না কাল, কাল পরশু; এ রকম করে হয়রানি করা হচ্ছে। এর ফলে, আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি কিন্তু এখনো শ্বশুরবাড়িতে তুলে দিতে পারিনি।

এমন প্রতারণার শিকার শুধু আবদুল কুদ্দুস নন, এই ফাঁদে পড়ে কারও ভেঙেছে সংসার, আবার কেউ চিকিৎসা করাতে না পেরে হারিয়েছেন সন্তান। কেউ কেউ টাকা চাইতে এসে শিকার হয়েছেন মারধরেরও। তাই শেষ পর্যন্ত আহমেদিয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্সের অফিসে টাকার দাবিতে অবস্থান নেন গ্রাহকরা।

পাওনা টাকার দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে আহমেদিয়া ফাইন্যান্স লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সাইফুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শতাধিক পাওনাদার।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিরপুর-১৪ নম্বরের মিলি সুপার মার্কেট এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এ অবরুদ্ধ করেন।

পাওনাদারদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটি তাদের টাকা দিয়ে দিক। আর টাকা না দিতে পারলে প্রতি মাসের লভ্যাংশ দিক। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা প্রতিষ্ঠান থেকে যাবেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুল ইসলাম বলেন, আহমেদিয়া ফাইন্যান্স লিমিটেডের কাছ থেকে শতাধিক মানুষ টাকা পায় আমরা জানতে পেরেছি। তাদের পাওনা টাকা না দেয়ায় গত রাত থেকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে তারা অবস্থান করছেন।

মিরপুরে আহমেদিয়া ফাইন্যান্স’র জিএম অবরুদ্ধ,পাওনা টাকা না পেয়ে আহাজারি

ছবিঃ সংগৃহীত

এক ভুক্তভোগী বলেন, এখানে আমার ৬ লাখ টাকা আছে। এ টাকা চাইতে আসায় আমাকে কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয় যে, আপনি কী করবেন? পারলে টাকা নেন, মালিকের কাছে যান, তাকে গিয়ে ধরেন!

এক নারী বলেন, আমার স্বামী এই টাকার যন্ত্রণায় স্ট্রোক করে মারা গেছেন।

 

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, তারা এখন আহমেদিয়া ফাইন্যান্স থেকে টাকা ট্রান্সফার করে ইউরোস্টারে নিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা বলছেন যে, তারা বর্তমানে ফাইন্যান্সে চাকরি করেন না, ইউরোস্টার গ্রুপে চাকরি করেন। শুধু নামটা পরিবর্তন করেছে, কিন্তু মালিকসহ সবই এক।

প্রায় ১৫ বছর ধরে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক বিভিন্ন উপায়ে সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করত আহমেদিয়া ফাইন্যান্স আন্ড কমার্স। শুরুতে লভ্যাংশ ও মুনাফার কিছু টাকা গ্রাহকদের দেয়া হলেও ধীরে ধীরে সুর পাল্টায় প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা। ১ হাজার ১০০ গ্রাহকের ৯৮ কোটি টাকা আটকে রেখে প্রতিষ্ঠানের মালিক মনির আহমেদ চালু করেন ইউরোস্টার গ্রুপ নামে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

আহমেদিয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কর্মাস এমসিএস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ৯৮ কোটি টাকার তালিকা আছে। এছাড়া ৩২ কোটি টাকা ফ্ল্যাটে সমন্বয় করা হয়েছে। এ সম্পদগুলো তাদের নিজস্ব। বাকি টাকাগুলোও সমন্বয় করার চেষ্টা চলছে। আর ছোটগুলো আগামী ডিসেম্বরে ক্লিয়ার করে এটা ক্লোজ করে দেয়া হবে।

এ ঘটনায় গ্রাহকরা বিভিন্ন সময়ে থানায় অভিযোগ জানালেও মামলা না করায় ব্যবস্থা নেয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, তারা বিভিন্ন সময় থানায় এসেছেন। আমি তাদেরকে সব সময় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তারা বলেছেন, মামলা করলে টাকা পাওয়া যাবে না। আর আমি তো আইনের বাইরে কোনো কথা বলতে পারি না। মামলা ছাড়া আমি তাদেরক ধরতেও পারি না।

এদিকে, ইউরোস্টার গ্রুপের মালিক মনির আহমেদ বেশ কিছুদিন ধরেই লাপাত্তা, বলছেন ভুক্তভোগীরা।

সূত্রঃ সময় টিভি