বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে প্রিপেইড মিটার চালু করলেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। গলা কাটা বিল, বা ডিজিটাল চুরির অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা।
বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার ব্যাবহারকারী কেউ বলছেন ২০০০টাকা রিচার্জ করে তেমন কিছু না চালিয়ে ৩-৪ দিন যাচ্ছে। আবার কারো বেলায় আরো কম। আগে যেখানে সারা মাসে এসি ব্যাবহার করে ২০০০টাকা বিল আসতো সেখানে এখন ৫/৬ হাজার টাকা রিচার্জ করতে হচ্ছে বলে জানান গ্রাহকরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকদের অভিযোগ এর শেষ নেই।
নতুন এই ব্যবস্থা নিয়ে গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়মের অভিযোগ করে আসছেন। সম্প্রতি এই মিটারে অস্বাভাবিক হারে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি এমনই একটি অভিযোগ করেন জেহাদ হোসেন চৌধুরি নামের একজন সাংবাদিক। তিনি তার ফেসবুকে প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জের এসএমএসসহ একটি পোস্ট করেন।
জেহাদ হোসেন চৌধুরি সেখানে লিখেন, ‘এইভাবে গরিবের গলা কাটা কতটা যৌক্তিক? ২২ এপ্রিল দুপুর পৌনে দুইটায় ৩ হাজার টাকার রিচার্জ করে মাত্র ৬ দিন না যেতেই ব্যালেন্স শেষ! এপ্রিল মাসে মাসে (মাত্র ২৮ দিনে) আমার ৬ হাজার টাকা সাবাড় করে দিয়েছে রাক্ষুসে প্রিপেইড মিটার।’
তার ওই পোস্টের নিচে বেশ কয়েকজন কমেন্ট করেছেন। যারা নিজেরাও এমন ভুক্তভোগী বলে উল্লেখ করেন সেখানে। এর মধ্যে জহিরুল হক সানি নামের একজন লিখেছেন, ‘আমার বাসায়ও সেইম অবস্থা। পরে বিদ্যুতের এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম মাসের শেষ দিকে বিদ্যুতের বিল একটু বেশি কাটে। প্রথম দিকে কম কাটে। মাসের প্রথম দিকে ৩ হাজার টাকায় যদি তিন দিন যায় তাহলে শেষ দিকে যাবে মাত্র একদিন। গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে এমনটাই হচ্ছে বলে ওই কর্মচারী জানিয়েছেন।
এমএইচ রবিন নামের একজন লিখেছেন, ‘ স্মার্ট চোর। কার কাছে বিচার দিব। বিচার কে করবে? একটা মিটার কিনতে হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকায়। এটা অফিস থেকে সিস্টেমে অনুমোদন করে আনতে লাগে আরো আট-দশ হাজার। এরপর প্রতি মাসে বিল ঢুকানোর সময় বলে ‘মিটার রেন্ট’। আমার মিটার, আমাকেই আবার ভাড়া দিতে হয়। কি আজব! এমন অনেকেই ওই পোস্টের নিচে তাদের ক্ষোভের বিষয়টি তুলে ধরেন।
এমডি ইসমাইল নামের একজন লিখেছেন, লুটেরা মাফিয়ার দল সাধারণ মানুষকে লুটে খাচ্ছে। এমন আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, ‘‘আমারও সেইম অবস্থা। এপ্রিলে মোট ছয় হাজার টাকা ভরেছি (রিচার্জ)। হয়তো কাল আবারও ভরতে (রিচার্জ) হবে। শফিকুল ইসলাম শাহীন লিখেছেন, ‘ভাই দেশে অরাজকতা চলছে। যার যে সুযোগ আছে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছে।’
এই বিষয়ে জেহাদ হোসেন চৌধুরি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তারা সব মিলে সংসারে লোক ৩ জন। সারাদিন একটি রুমে এসি চলে। আর রাত ৯ টার পর দুই রুমে এসি ও ফ্যান চলে। এর বাইরে অতিরিক্ত ফ্যান লাইটের তেমন ব্যবহার নেই। এতো কম বিদ্যুৎ পুড়িয়ে এতো টাকা বিল হওয়ার কথা নয়। এটি স্রেফ চুরি।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিল আদায়ে নিয়োজিত অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো বিদ্যুৎ বিল আদায়ে অতিরিক্ত কঠোরতা অবলম্বন করছে। তাদের প্রতি মাসে বকেয়া আদায়ের পাশাপাশি টার্গেট দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে সরাসরি ব্যাংক, এজেন্ট ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং দোকান থেকে বিল সংগ্রহ করা হয়।
সূত্র জানায়, প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে এই ধরনের সংগ্রহের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই সেখান থেকে টাকা কেটে নেওয়া খুব সহজ। মাস শেষে এটি কাটা হলে বিদ্যুৎ বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সহজ হয়ে যায়।
গ্রাহকদের অনেকের ক্ষোভ এই অভিযোগ কাকে জানাবে, বা কোথায় করলে এর সমাধান মিলবে? আদৌ কি মিলবে সমাধান। এই ভোগান্তি থেকে বাঁচতে সরকারের বিশেষ নজর আশা করছেন সাধারণ জনগন।
— নিউজ ডেস্ক