শনিবার (২২ জুন) দুপুরে বরগুনা জেলার আমতলী এলাকার হলদিয়া- চাওড়া সীমান্তবর্তী চাওড়া হলদিয়া খালের ওপর লোহার ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে নিহত হন ৯জন।

কাঁদতে কাঁদতে  বরগুনার আমতলীতে সেতু ভেঙে শিশু কন্যাসহ বেঁচে ফেরা মালয়শিয়া প্রবাসী সোহেল খান বলেন-

‘খালাতো বোনের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে ভাঙা জরাজীর্ণ সেতুটি পার হতে গেলে স্ত্রী রাইতি সবাইকে আল্লাহর নাম নিতে বলে। তার ঠিক এক মিনিটের মাথায় সেতুটি ভেঙে মাইক্রোবাসটি ডুবে যায়। আমার কোলে ছিল ৭ মাসের শিশু কন্যা। তাকে নিয়ে আমি জানালার ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আসি। পরে বার বার চালককে গাড়ির লক খুলতে বলি কিন্তু সে পালিয়ে যায়। এরপর বাচ্চাকে অন্যদের কাছে রেখে নদীতে নেমে আরও দুজনকে বাঁচাই। কিন্ত চোখের সামনেই স্ত্রী, মা, শাশুড়ি, দুই মামি, দুই মামাতো বোনসহ গাড়িটি ডুবে ৯ জন মারা যান। এক মিনিটেই সব শেষ, বাঁচানো গেল না তাদের।’ 

নিহত ৯ জনের মধ্যে ৭ জনই মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া ও চরাপাড়া এলাকার একই পরিবারের আত্মীয়স্বজন। নিহতরা একটি বৌভাত অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল। শনিবার (২২ জুন) দুপুরে বরগুনা জেলার আমতলী এলাকার হলদিয়া- চাওড়া সীমান্তবর্তী চাওড়া হলদিয়া খালের ওপর লোহার ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ সেটা সাইনবোর্ড আকারে লেখা ছিল ব্রিজের পাশে।

104

দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার মধ্যরাতে নিহত ৭ জনের লাশ শিবচরের ভদ্রাসনে আসলে সেখানে শোকের মাতম শুরু হয়। স্বজনদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

রবিবার (২৩ জুন) সকাল ১০টার দিকে নিহতদের লাশের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এসময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ১০ হাজার করে মোট ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়।

এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ব্যাংকার আবুল কালাম আজাদের দুই সন্তান ও স্ত্রী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর সবার টনক নড়ে। আগে যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আমাদের এত বড় ক্ষতি হতো না। আমাদের সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে।’

ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রহিম বেপারী বলেন, ‘আমার জীবনে এই প্রথম একসঙ্গে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যু দেখলাম। এটা খুব দুঃখজনক। এ ঘটনায় আমরা এলাকাবাসী মর্মাহত। যে ব্রিজটি ভেঙে এই দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে প্রশাসনের গাফিলতি ছিল বলে আমি মনে করি। এ ঘটনায় যাদের দায়িত্ব অবহেলা ছিল তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের সাতজন নিহতের ঘটনা খুব দুঃখজনক। আমরা নিহতদের দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলিতে বোনের মেয়ে হুমায়রার বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে যায় শিবচরের ভদ্রাসনের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী টেলিটক চাকরিজীবি মুন্নী বেগম, দুই মেয়ে তাহিয়া ও তাসফিহা।

এর আগে বুধবার শিবচরের একই ইউনিয়নের সাহাপাড়া গ্রামের বোন ফরিদা বেগম, ভাবী ফাতেমা বেগম, দুই ভাগ্নে মাহাবুব খান, সোহেল খান, তার স্ত্রী রাইতি, রাইতির মা রুমি বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা ও আত্মীয়স্বজন ওই অনুষ্ঠানে যায়। শুক্রবার বিয়েতে সবাই অংশ নেয়। শনিবার এদেরসহ আত্মীয়স্বজন নিয়ে বৌ-ভাতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে দুপুরে বরগুনা জেলার আমতলী এলাকার হলদিয়া-চাওড়া সীমান্তবর্তী চাওড়া হলদিয়া খালের ওপর লোহার ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে যায়।

এতে ব্যাংকার আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মুন্নী বেগম, দুই মেয়ে তাহিয়া ও তাসফিহা এবং তার বড় ভাই বাবুল মাদবরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, বোন ফরিদা বেগম, ফরিদা বেগমের ছেলে সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি বেগম, রাইতির মা রুমি বেগম নিহত হয়। এদের সবার বাড়ি ভদ্রাসনের সাহাপাড়া ও চরপাড়া গ্রামে। এছাড়া বরগুনার আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া এবং কন্যা রিদি মারা যায়।

সূত্রঃ প্রবা