সরকার পতনের পর থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ কাউন্সিলর পলাতক রয়েছেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি কাউন্সিলরদের নিয়ে। যার কারণে ওয়ার্ড কাউন্সিলর না থাকায় জনগণ সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।

কাউন্সিলর না থাকায় ঢাকার দুই সিটির কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে দেওয়া নাগরিক সনদ পাচ্ছেন না মানুষ। দুই সিটি করপোরেশনের ৯৫ ভাগ কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ সমর্থক। যার কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়রদের অপসারণ করে কাউন্সিলরদের রেখে নগর প্রশাসন ও সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তারা বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উচিত হবে মেয়রদের মতো কাউন্সিলরদেরও বহিষ্কার করে দেওয়া। একই সঙ্গে আঞ্চলিক কার্যালয়ে ঐ সেবা স্থানান্তর করা।

সরেজমিনে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়কের ড্রেনেজব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ অর্ধেক করে ফেলে রেখেছে ঠিকাদাররা। যেসব আগে কাউন্সিলররা তদারকি করতেন। এখন তারা না থাকায় সেটির কাজ আগাচ্ছে না। উত্তর সিটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পীরেরবাগ এলাকার কমিশনার গলিতে দেখা যায়, প্রায় এক মাস ধরে ড্রেনের ঢাকনা খুলে রেখেছে ঠিকাদাররা। মিরপুর এলাকার বেশির ভাগ ওয়ার্ড কাউন্সিলর লাপাত্তা। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।

কয়েক জন ওয়ার্ড সচিবরা দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকলেও কাউন্সিলরদের পাওয়া যায়নি। মিরপুর-২ এর বাসিন্দা শামীম হোসেন জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে নাগরিক সনদ ও ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়। এসব সেবার সনদ নিতে কাউন্সিলরের স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক বার গিয়েও ফিরে এসেছি।

অন্য এক বাসিন্দা বলেন, আগে কাউন্সিলর অফিস থেকে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কাজ তদারকি করা হতো। কয়েক দিন ধরে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কার কাছে বলব তাও বুঝতে পারছি না। কাউন্সিলর অফিসে তালা ঝুলছে। মশার ওষুধ ছিটানো, রাস্তাঘাট পরিষ্কার, জন্ম-মৃত্যু সনদসহ ১৪টি খাতে সেবা দিয়ে থাকেন কাউন্সিলররা। এখন অচল প্রায় কাউন্সিলর অফিস।

তুরাগের কামারপাড়া এলাকার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম যুবরাজের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলার কার্যালয় তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। কাউন্সিলর অফিসের নিচে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি। ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর অভিযোগে এলাকায় যুবরাজের বিচারের দাবিতে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।

একই অবস্থা উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শরীফুর রহমানের কার্যালয়েরও। এলাকাবাসী জানায়, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পর থেকে পলাতক রয়েছেন এই কাউন্সিলর।

এলাকাবাসী জানায়, সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখে গা-ঢাকা দিয়েছেন ডিএনসিসি ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আফসার উদ্দিন খান, দক্ষিণখান-আশকোনার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনিসুর রহমান নাঈম এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা ডি এম শামীমও।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের সক্রিয় থাকায় জনতার ভয়ে তারা সবাই পালিয়েছেন। নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে ডিএনসিসির ৫২ ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন তুরাগের বিশাল এলাকায়ও।

সূত্রঃ ইত্তেফাক