গাজীপুরের শ্রীপুরে র‌্যাব পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে এক কারখানা কর্মকর্তাদের কাছে থাকা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাসের ১৯ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মূলহোতা হামিম ইসলামসহ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, র‍্যাব লেখা জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ, অন্যান্য সরঞ্জাম এবং আসামিদের কাছ থেকে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

বুধবার রাতে রাজধানীর রামপুরা, উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এর আগে গাজীপুরের শ্রীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। মামলার ছায়া-তদন্ত করে ডাকাতি চক্রের মূলহোতা হামিম ইসলামসহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন চক্রের মূলহোতা হামিম ইসলাম , মো. জিন্নাহ মিয়া, মো. আমিন হোসেন, মো. রুবেল ইসলাম, মো. আশিকুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থা আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

তিনি বলেন, ৬ জুন বিকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তিন কর্মকর্তা একটি প্রাইভেট ব্যাংক থেকে কারখানার শ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস ও পরিবহন খরচের সাড়ে ১৯ লাখ টাকা নিয়ে প্রাইভেটকারে কারখানায় ফিরছিলেন। তাদের বহনকারী গাড়িটি কারখানার কাছাকাছি এলে একটি গাড়ির গতিরোধ করে চক্রটি। এ সময় র‌্যাবের জ্যাকেট পরা কয়েকজন ব্যক্তি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কর্মকর্তাদের অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করে গাজীপুর-ময়মনসিংহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকায় তিনজনকে নামিয়ে দেন।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কমান্ডার আরাফাত বলেন, ডাকাত দলটির প্রধান হামিম। এই ডাকাত দলে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রয়েছে। এ ছাড়াও গ্রেপ্তাররা ডাকাতি কাজে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করত। তিন থেকে চার বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গাজীপুর, টঙ্গী, উত্তরাসহ রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল। ডাকাতির কৌশল হিসেবে বিভিন্ন সময় নিজেদের র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সদস্য পরিচয় দেওয়াসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোগো সম্বলিত স্টিকার ব্যবহার করতেন। এ দলের কিছু সদস্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজরদারি করেন। বেশি অর্থ উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে বাইরে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যদের জানিয়ে দেন। পরে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা ব্যক্তির গাড়ির গতিরোধ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে মারধর করে তাদের কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যেতেন। তারা মাসে দুই থেকে তিনটি ডাকাতি করতেন। চক্রটি পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিলেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার রুবেল দীর্ঘ দিন ধরে ডাকাতি পেশায় জড়িত। তিনি চক্রের মূলহোতা হামিমের প্রধান সহযোগী। ডাকাতির কৌশল হিসেবে বিভিন্ন সময় নিজেকে ভুয়া সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া সদস্য পরিচয় দিতেন। বরিশাল, ফরিদপুর, গাজীপুর, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ডিবি ও র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিলেন রুবেল।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক থেকে বের হওয়ার তথ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হামিমকে জানিয় দিতেন রুবেল। ডাকাতি মামলায় বেশকয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ধর্ষণ, মাদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মিথ্যা পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উৎসবের সময়ে আর্থিক লেনদেন বেশি হয়। অনেকেই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রয়োজনে টাকা লেনদেন করেন। এই সময়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অনেক বেশি থাকে। ব্যাংকেও আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের অনুরোধ থাকবে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলে এমন ঘটনা এড়ানো যাবে।

ঈদকে কেন্দ্র করে র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা বেপারিদের উদ্দেশ্য র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, আমরা অনুরোধ করব বড় অঙ্কের টাকা বহনের সময়ে নিকটস্থ র‍্যাবকে জানালে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

আসল ও নকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যেভাবে চিনবেন। আপনাদের যদি কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কেউ পথরোধ করলে আসল পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। সাদা পোশাকে কাউকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে না। আমাদের অনুরোধ থাকল র‍্যাব, পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনীর সদস্য হলে পরিচয় নিশ্চিত করে নেবেন।

চক্রের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্তমান বা সাবেক কোনো সদস্য জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই চক্রটি র‍্যাব, পুলিশ, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার পরিচয় ব্যবহার করতেন। এমনকি সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করতেন। চক্রের বেশ কয়েকজন এখনও পলাতক রয়েছেন। তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কাজ করেন। তবে এখন পর্যন্ত এই চক্রের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে তারা অনলাইনসহ নানাভাবে টেকনিক শিখে কাজ করে আসছিলেন।