কারাগারে বসে এগিয়ে ইমরান খান; ঝুলন্ত পার্লামেন্টের পথে পাকিস্তান
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে ইমরান খানের দল তেহরিকে ইনসাফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৮৯টি আসনে জয়ী হয়েছেন।
আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (পিএমএল-এন)। তারা পেয়েছে ৬০টি আসন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। তারা পেয়েছে ৪৭টি আসন।
কারাগারে থেকেই জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান। নির্বাচনে নিজে নিষিদ্ধ, দল নিষিদ্ধ, প্রতীক নিষিদ্ধÑ তারপরও তার জনপ্রিয়তার ম্যাজিকে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে সবচেয়ে বেশি আসন পেতে চলেছেন।
সহিংসতা, প্রাণহানি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও বিতর্কে মোড়ানো পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট আভাস দিচ্ছে, ঝুলন্ত পার্লামেন্টের পথে রয়েছে দেশটি। গত বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের পর গণনা শুরু হয়। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত পাকিস্তানি গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে কোনো দল সরকার গঠনের মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। ফলে স্বতন্ত্রদের নিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ থাকছে নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো উভয়েরই সামনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আভাস দিয়েছিলেন, এবারের নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রধান নওয়াজ হয়তো সহজ জয় পাবেন না। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মোট ২৬৬টি আসনের মধ্যে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ২২০ আসনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করে। তাতে দেখা যায়, নওয়াজের দল পিএমএল-এনের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৬২টি আসনে। কারাবন্দি ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের সমর্থিত প্রার্থীরা ৯০ আসনে জয় পেয়েছেন। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপিপি পেয়েছে ৪৯টি আসন।
৪৬ আসনের ফলাফল ঘোষণা করতে বাকি। রাতের মধ্যেই সব আসনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার কথা। বাকি আসনগুলোর সবই যদি নওয়াজ শরিফের দল পায়, তাহলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৪টি আসন পূর্ণ হবে না। আর স্বতন্ত্র জয়ীরা যেহেতু কোনো দলের সঙ্গে নেই, ফলে তারা সরকার গঠন করতে পারবেন না। কোনো-না কোনো দলকে সমর্থন দিতে হবে তাদের। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্ররা যদি নওয়াজ শরিফকে সমর্থন দেন, তাহলে নওয়াজই সরকারপ্রধান হতে পারবেন। আর পিপিপি-প্রধান বিলাওয়াল যদি স্বতন্ত্রদের সমর্থন আদায় করতে পারেন, তাহলে তারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকছে।
শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় নওয়াজ শরিফ বলেছেন, দল হিসেবে তার দল পিএমএল-এন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। কারণ স্বতন্ত্ররা কোনো দলের নন। তা ছাড়া নির্বাচনে নিষিদ্ধ পিটিআই সরকার গঠনের ডাক পাবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ পিটিআইয়ের প্রতীক নিয়ে কোনো প্রার্থী নির্বাচন করতে পারেননি। ফলে সরকার গঠনের সুযোগ নওয়াজ ও বিলাওয়াল উভয়েই পাচ্ছেন না। এখন দেখার বিষয় রাজনীতির খেলায় শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হন আর কে-বা প্রধানমন্ত্রী হন।
সরকার গড়তে স্বতন্ত্র বিজয়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পিএমএল-এন
পিএমএল-এন নেতারা বলছেন, তারা সরকার গঠন করতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাদের দলের প্রধান নওয়াজ শরিফ বিজয়ী ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পিএমএল-এনের প্রধান সংগঠক মরিয়ম নেওয়াজ লিখেন, একশ্রেণির গণমাধ্যমের ভুয়া পূর্বাভাসকে মিথ্যা প্রমাণ করে পিএমএল-এন কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
মরিয়াম লিখেছেন, ‘আরও ফল আসছে। শিগগিরই দলীয় প্রধান বিজয় ভাষণ দিতে পিএমএল-এনের সদর দপ্তরে যাবেন।’
অন্যদিকে পিএমএল-এনের নেতা ইসহাক দার বলেন, নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
জিও নিউজের সঙ্গে আলাপকালে সাবেক অর্থমন্ত্রী শুক্রবার বলেন, ‘বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সংবিধান মোতাবেক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তারা যেকোনো দলের সঙ্গে জোট করবেন।’
ইসহাক দার বলেন, পিএমএল-এন কোনো বিজয়ী পার্লামেন্ট সদস্যকে দলে যোগ দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে পারে না; বরং বিজয়ীদের অনেকে তাদের দলের সঙ্গে যোগ দিতে যোগাযোগ করছেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয়ী স্বতন্ত্র পার্লামেন্ট সদস্যরা কোনো দলে যোগ না দিলে তারা সংরক্ষিত আসন হারাবেন। পাঞ্জাবে পিএমএল-এনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি।’
ইসহাক দার দাবি করেন, শাহবাজের নেতৃত্বাধীন দল পাঞ্জাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছে। জাতীয় পরিষদেও তাদের দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
ইসহাক দার বলেন, তাদের দলীয় প্রধান নওয়াজ শরিফ বলেছেন, তাদের দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তিনি অন্যান্য দলের সঙ্গে হাত মেলাবেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা কেন্দ্র ও পাঞ্জাব প্রদেশে সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী। অন্য কেউ সরকার গঠন করলেও আমরা সেটা মেনে নেব।’
সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ
Aninda, Sub-Editor